দমদম এয়ারপোর্ট থেকে যশোর রোড ধরে কিছুটা দক্ষিণে এলেই চোখে পড়বে রাস্তার ধারে বিরাট পাঁচিল দিয়ে ঘেরা এলাকা। তার সামনে বড়ো বড়ো করে লেখা, ‘অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড’। নিছক একটা অস্ত্র তৈরির কারখানা নয়, এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ২৪৬ বছরের ইতিহাস। এমনকি ভারতীয় রেলওয়ে বা ভারতীয় সেনাবাহিনীর চেয়েও অনেক প্রাচীন এই ইতিহাস। তবে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন নির্দেশিকা ঘিরে তৈরি হয়েছে বিতর্কও। এবার হয়তো সেই ইতিহাসের ইতি ঘটতে চলেছে। সেইসঙ্গে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে সংস্থার ৭০ হাজার কর্মচারীর ভবিষ্যত।
১৭১২ সালে ডাচ অস্টেন্ড কোম্পানি প্রথম আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির কারখানা চালু করে ইছাপুরে। ভারতে এতদিন ধরে ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্রের চেয়ে তা সবদিক থেকেই আধুনিক। তখন অবশ্য ইউরোপের প্রতিটা দেশই ভারতে উপনিবেশ বিস্তারের চেষ্টা করছে। আর সেই উদ্দেশ্যেই তৈরি এই কারখানা। এরপর ইংরেজ ছাড়া অন্যান্য জাতির উপনিবেশ স্থাপনের স্বপ্ন কার্যত ব্যর্থ হয়। অনিশ্চিত হয়ে পড়ে ইছাপুরের কারখানার ভবিষ্যতও। তবে ১৭৭৫ সালে কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে তৈরি হল বোর্ড অফ অর্ডন্যান্স। এরপর ২৪৬ বছর ধরে একটু একটু করে সেই ইতিহাসে নতুন নতুন মাইলস্টোন যুক্ত হতে হতে গিয়েছে।
বর্তমানে ‘অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড’-এর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে মোট ৪১টি কারখানা। এর মধ্যে ১৮টি তৈরি হয়েছিল ব্রিটিশ আমলে। আর বাকি ২৩টি কারখানা তৈরি হয়েছে স্বাধীন ভারতে। শুধুই ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য অস্ত্র সরবরাহ নয়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মিত্রশক্তির যাবতীয় যুদ্ধ সরঞ্জামের অন্যতম বড়ো উৎস ছিল এই অস্ত্র কারখানাগুলি। পাশাপাশি ইসরো, ডিআরডিও, সেইলের মতো বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি সংস্থার গড়ে ওঠার পিছনেও এই কারখানাগুলির ভূমিকা নেহাৎ কম নয়। তবে সাম্প্রতিক বেশ কিছু পার্লামেন্টারি রিপোর্টে বারবার বলা হয়েছে প্রচলিত ব্যবস্থার পরিবর্তে কর্পোরেট বাজারের আওতায় আনা হোক অস্ত্র নির্মাণ প্রকল্পকে। আর তার কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, বিগত এক দশকে বারবার উৎপাদনসীমার লক্ষমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে ‘অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড’। আর এই সমস্যার সমাধানেই শেষ পর্যন্ত প্রতিরক্ষা মন্ত্রক থেকে জানানো হয়েছে ৪১টি কারখানাকে ৭টি কর্পোরেট সংস্থার আওতায় ভাগ করে দেওয়া হবে। তবে সার্বিকভাবে পাবলিক সেক্টর আন্ডারটেকিং হিসাবেই থাকবে কারখানাগুলি।
ইতিমধ্যে সরকারের এই নির্দেশের বিরুদ্ধে আন্দোলনের পথে নামার কথা জানিয়েছে অস্ত্র নির্মাতা শ্রমিকদের ইউনিয়নগুলি। ঐতিহাসিক এই প্রতিষ্ঠানকে বাঁচিয়ে রাখার পাশাপাশি তাঁদের নিজেদের রুটিরুজিও যে জড়িয়ে। যদিও প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং জানিয়েছেন, মালিকানা হস্তান্তরের ফলে যাতে একজন শ্রমিকও কাজ না হারান, সে-বিষয়ে সবরকম ব্যবস্থা নেবে সরকার। এমনকি তাঁরা যে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে এতদিন কাজ করেছেন, তাও অক্ষুণ্ণ থাকবে বলেই জানিয়েছেন তিনি। তবে সরকারের এই আশ্বাসের পরেও ভরসা রাখতে পারছেন না অনেকেই। সাম্প্রতিক সময়ে পাবলিক সার্ভিস আন্ডারটেকিং শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলির উপর থেকে সরকারি নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই কমিয়ে আনা হয়েছে। দেশের অস্ত্রশিল্পের মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্পকে তাই বে-সরকারি হাতে ছেড়ে দিতে আপত্তি জানাচ্ছেন অনেকেই।
আরও পড়ুন
অসমে অবস্থিত এশিয়ার বৃহত্তম পেপার মিল এবার নিলামে
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
অসমে রিফাইনারির সম্পূর্ণ শেয়ার বিক্রি ভারত পেট্রোলিয়ামের; বেসরকারিকরণে অনাস্থা?