থরে থরে সাজানো রয়েছে মোউসার ক্যারাবাইনার, ড্রেইসে রিভলভার, হাউৎজার রাইফেল, বুলেট। রয়েছে অজস্র সেনাবাহিনীর ইউনিফর্ম, রৌপ্য মুদ্রা, ফলক, স্মারকলিপি, ব্যাজ। আর এই সবকিছুরই বয়স প্রায় আট থেকে নয় দশক। হ্যাঁ, এসব সাধারণ কোনো সামগ্রী নয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (World War II) সময় খোদ নাৎসি (Nazis) সেনাদের ব্যবহৃত হাতিয়ার (Weapons) এবং পোশাক (Uniform)। এক কথায় চোখ ধাঁধিয়ে যাওয়ার মতো সংগ্রহ যাকে বলে।
চোখ ধাঁধিয়ে গিয়েছিল পুলিশেরও। অপরাধীকে ধরতে গিয়ে এমন এক অদ্ভুত ‘মিউজিয়াম’-এ এসে হাজির হবেন, তা তাঁরা নিজেও জানতেন না। সম্প্রতি এমনই বিস্ময়কর ঘটনা ঘটল ব্রাজিলের রিও ডিজেনেইরো শহরে। এক পেডোফাইলকে ধরতে গিয়েই বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত ঐতিহাসিক প্রত্নসংগ্রহের এক ভাণ্ডার আবিষ্কার করলেন তাঁরা। তৃতীয় রেইখ আমলের প্রায় আট হাজার এই প্রত্নসামগ্রীর আনুমানিক দাম কমপক্ষে ৩৫ লক্ষ মার্কিন ডলার।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নামে অভিযোগ ছিল, প্রতিবেশীর শিশুকন্যাকে জোর করে অপহরণের চেষ্টা করেছিলেন তিনি। তাঁর অভিব্যক্তি থেকে স্পষ্ট বোঝা গিয়েছিল, যৌন নির্যাতন কিংবা ধর্ষণই ছিল মূল উদ্দেশ্য। তবে বিপত্তি বাঁধার আগেই স্থানীয়দের চোখে পড়ে যেতে অল্পের জন্য রেহাই পায় শিশুটি। তারপরই থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয় ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেপ্তারি পরওয়ানা জারি করা হয়েছিল ওই ব্যক্তির নামে। আর তাঁকে ধরতে গিয়েই এমন রত্নখনির সন্ধান পেল ব্রাজিল পুলিশ।
তবে নিছকই ঐতিহাসিক সংগ্রহ নয়। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান নাৎসি জার্মানির প্রতি অগাধ ‘শ্রদ্ধা’ এবং সমর্থন থেকেই এইসব সামগ্রীর ভাণ্ডার গড়ে তুলেছেন ওই ব্যক্তি। তাঁর বাড়ি থেকে পাওয়া গেছে ফ্রেমে বাঁধানো একাধিক হিটলারের ছবিও। এখানেই শেষ নয়। তাঁর ব্যক্তিগত কম্পিউটার থেকে পাওয়া গেছে চাইল্ড পর্নোগ্রাফির বিপুল সংগ্রহ। ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে বন্দুকের অবৈধ দখলদারি, শিশু নির্যাতন, জাতিগত হিংসা ছড়ানোর মানসিকতা-সহ একাধিক অভিযোগ দায়ের করেছে ব্রাজিল পুলিশ। বর্তমানে তাঁকে রাখা হয়েছে জেল হেফাজতে। চলছে তদন্ত। দোষী সাব্যস্ত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ৩০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে বলে জানাচ্ছেন রিও ডিজেনেইরোর পুলিশ অধিকর্তা।
আরও পড়ুন
প্রকাশ্যে ঝুলছে অপরাধীর মৃতদেহ, তালিবানদের নৃশংসতায় নাৎসি-ছায়া
কিন্তু এসবের পরেও প্রশ্ন থেকে যায়, তাঁর কাছে কোথা থেকে এল এমন সব সামগ্রী? এইসব বহুমূল্য প্রত্নসামগ্রীর অর্থই বা পেলেন তিনি কোথা থেকে? সেই রহস্যের জট এখনও খুলতে পারেননি গোয়েন্দারা। অনুমান, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বেআইনি নিলামেই এইসব কেনাবেচা করতেন তিনি। আর সবটাই হত ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমে। ওই ব্যক্তি নিজেও অবৈধ ব্যবসা কিংবা র্যা কেটের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন বলেও সন্দেহ করছেন গোয়েন্দারা।
আরও পড়ুন
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে কলকাতা হয়ে তিব্বতে নাৎসিরা, কী ছিল উদ্দেশ্য?
তবে এই প্রত্নখনির খোঁজ পেয়ে রীতিমতো সমস্যায় পড়েছে রিও-র পুলিশ বিভাগ। বহুমূল্য এই সংগ্রহ তো আর সুরক্ষাহীনভাবে ফেলে রাখা যায় না। বিশেষ করে, এই সংগ্রহের কথা সংবাদমাধ্যমে পাতায় উঠে আসায় চুরি হওয়ার সম্ভাবনাও আকাশচুম্বী। ফলত, ২৪ ঘণ্টা প্রহরার বন্দোবস্ত করা হয়েছে ওই ব্যক্তির বাড়িতে। প্রাথমিক পরীক্ষানিরীক্ষার পর সেগুলি রিও ডিজেনেইরোর পুলিশ মিউজিয়ামে সংরক্ষণ করা হবে বলেই জানাচ্ছে ব্রাজিল প্রশাসন…
আরও পড়ুন
নাৎসিদের বিরুদ্ধে গানই অস্ত্র ‘জলদস্যু’দের, দিতে হয়েছিল প্রাণও
Powered by Froala Editor