Powered by Froala Editor
কোন পথে এল সাফল্য? একনজরে কৃষক আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি
১/১১
দেশজুড়ে উৎসবের আবহাওয়া। আজ সকালে কৃষিবিল প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কী এই কৃষি বিল? এই নিয়ে দেশজুড়ে ক্ষোভ বা আন্দোলনই বা দানা বাঁধল কী করে?
২/১১
এক বছর আগের কথা। রাজ্যসভায় কৃষিসংক্রান্ত তিনটি বিল উপস্থাপন করে কেন্দ্র সরকার। তার কয়েকদিন পরেই ২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর লোকসভায় পাশ হয় সেই বিল। কী কী নতুন নীতি ছিল সেই কৃষি বিলে?
৩/১১
প্রথমত অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের তালিকা থেকে বাদ পড়েছিল চাল, গম, আটা, আলু, পেঁয়াজের মতো শস্য। ফলে, এই ধরনের পণ্যগুলি স্টোরেজে যদৃচ্ছ সঞ্চয় করার স্বাধীনতা দেওয়া হয় কৃষক, মহাজন বা ডিলারদের। এই সুবিধা কৃষকদের জন্য জারি থাকলেও আসলে এই আইন পুঁজিপতিদেরই বাড়তি সুযোগ করে দেবে, তাতে সন্দেহ ছিল না কোনো।
৪/১১
দ্বিতীয়ত অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ থেকে হাত সরিয়ে নেয় কেন্দ্র সরকার। ফলে কর্পোরেট ধাঁচে কৃষি ব্যবস্থায় কৃষকদের ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছিল প্রবলভাবে।
৫/১১
এই নিয়েই অসন্তোষ তৈরি হয়েছিল কৃষকদের মধ্যে। কৃষি বিলের বিরোধিতায় প্রথম স্বতন্ত্র আন্দোলনের ডাক দেন পাঞ্জাব ও হরিয়ানার কৃষকরা। সেই আন্দোলনে একে একে যোগ দিতে থাকে গোটা ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের কৃষক সংগঠন।
৬/১১
অক্টোবর মাস থেকেই দিল্লি-হরিয়ানা সীমান্তে শুরু হয় লাগাতার প্রতিবাদ অবস্থান, ধর্মঘট। প্রচণ্ড ঠান্ডায় প্রাণ হারান প্রায় ছ’শোর বেশি কৃষক। কিন্তু তারপরেও অবস্থান থেকে সরে আসেননি কৃষকরা। বরং, এই ঘটনা যেন বাড়তি জ্বালানি জুগিয়েছিল আন্দোলনের।
৭/১১
এর পর প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন ঐতিহাসিক এক ঘটনার সাক্ষী থাকে দিল্লি। চলতি বছরে ২৬ জানুয়ারি দিল্লির একাধিক অঞ্চলে ব্যারিকেড ভেঙে ট্রাক্টর মিছিল করে লালকেল্লার সামনে পৌঁছে যায় আন্দোলনরত কৃষকরা। লালকেল্লার স্তম্ভের মাথায় ওড়ানো হয় কৃষক সংগঠনের পতাকাও।
৮/১১
অবশ্য কৃষকদের লালকেল্লা দখল নিয়ে সাড়া পড়ে গিয়েছিল গোটা ভারতেই। বিভিন্ন মহলে ঘনিয়ে উঠেছিল বিতর্ক। উঠেছিল ষড়যন্ত্রের অভিযোগও। দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধেও প্রকাশ্যে গুলি চালানোর অভিযোগ তুলেছিলেন বহু কৃষক। সাময়িকভাবে আন্দোলন থিতু হয়ে পড়লেও, ফের জমাট বাঁধে প্রতিবাদের ভাষা।
৯/১১
সেইসময়েই শীর্ষ আদালতে কৃষিবিলের সত্যতা ও বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা হয়েছিল একটি জনস্বার্থ মামলা। শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এস এস বোবদে কৃষিবিলের স্থগিতাদেশ দিয়েছিলেন কেন্দ্রকে। তবে পাল্টা মামলা দায়ের হওয়ায়, নিষ্পত্তি হয়নি সেই মামলার।
১০/১১
তবে মামলার নিষ্পত্তি না হলেও, শেষ পর্যন্ত কৃষিবিল প্রত্যাহার করল কেন্দ্র সরকার। অবশেষে প্রায় এক বছর ধরে আন্দোলন চলার পর ঐতিহাসিক জয় এল কৃষকদের কাছে।
১১/১১
১৮৫৯ সালে কৃষ্ণনগরে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে এমনই সঙ্গবদ্ধ, স্বতন্ত্র আন্দোলনে নেমেছিলেন নীলচাষিরা। প্রাণ গিয়েছিল বহু মানুষের। প্রায় দেড়শো বছর পেরিয়ে সেই স্মৃতিই যেন উস্কে দিল কৃষক আন্দোলন। স্বাধীনতার পর এত বড়ো গণতান্ত্রিক আন্দোলন হয়নি বললেই চলে। এই আন্দোলন কতটা ঠিক বা ভুল— তা বিচার করবে ভবিষ্যৎই। তবে ইতিহাসের পাতায় এই আন্দোলন পাকাপাকি জায়গা করে নিল, তা নিয়ে সন্দেহ নেই কোনো…