৬ আগস্ট, ১৯৪৫। অর্থাৎ আজ থেকে ঠিক ৭৫ বছর আগের একটি দিন। পৃথিবীর আর পাঁচটা শহরের মতোই শান্ত নিরুপদ্রব একটি দিন শুরু হয়েছিল হিরোশিমায়। বেলা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কেউ অফিসে কেউ স্কুলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে শুরু করেছে। ঠিক এই সময় আকাশে ঝলসে উঠল আলো। আর তার পরেই কান ফাটানো শব্দে সবকিছু ছত্রখান হয়ে পড়ল। যুদ্ধের নিদারুণ শাস্তি ভোগ করল একদল নিরাপরাধ মানুষ। মুহুর্তে যেন গোটা শহরটাকে শ্মশানে পরিণত করল একটা ৯০০ পাউন্ডের ইউরেনিয়াম বোমা। তবু বোমার আঘাতে কি সবকিছু শেষ হয়ে যায়? নাকি প্রকৃতির মধ্যেই আছে এমন শক্তি, যাকে হত্যা করার ক্ষমতা এখনও মানুষের নেই?
‘হিবাকুজোমোকু’ শব্দটা জাপানি। শুনলেই মনে পড়ে আরেক শব্দ, হিবাকুশার কথা। হিবাকুশা বলতে হিরোশিমা বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত অক্ষম বিকলাঙ্গ মানুষ, আর হিবাকুজোমোকু হল বিস্ফোরণের পরেও ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা গাছের দল। অবশ্য প্রথমে সবাই মনে করেছিলেন এইসব গাছ আসলে মারা গিয়েছে। কেবল তার শরীরটুকুই দাঁড়িয়ে আছে। এমনকি ১৯৫১ সালে হিরোশিমা কর্তৃপক্ষ থেকে ইউরোপের দেশগুলির কাছে গাছের বীজ চেয়ে আবেদনও করা হয়। কিন্তু আজ ৭৫ বছর পরেও দেখা যায়, গাছগুলিতে নিয়ম মেনে নতুন সবুজ পাতা জন্মায়। এমনকি তার বীজ থেকে জন্মায় নতুন গাছও।
২০১১ সালে নাসরিন আজিমি নামের এক গবেষক ঠিক করেন, হিরোশিমার পরমাণুবোমা-বিধ্বস্ত গাছ থেকেই কি জন্ম নিতে পারে না নতুন গাছের চারা? আর এই ভাবনা থেকেই তৈরি হয় গ্রিন লেগেসি হিরোশিমা প্রকল্প। আজ সেই ১৭০টি গাছের ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করে পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে দিচ্ছে এই সংস্থা। সদস্যদের কাছে এটা কোনো ব্যবসায়ী প্রকল্প নয়। বরং যুদ্ধের বিরুদ্ধে এক শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ হিসাবেই এই কার্যক্রমকে বেছে নিয়েছেন তাঁরা। আর এই একেকটি চারার জন্মের মধ্যে দিয়েই তাঁরা প্রমাণ করে দিতে চান, পৃথিবীকে সম্পূর্ণ শেষ করার মতো প্রযুক্তি আজও মানুষের হাতে নেই। ইতিহাসের সবচেয়ে মর্মান্তিক দুটি বিষ্ফোরণের পরেও হিরোশিমাতে ১৭০ টি এবং নাগাশাকিতে ৫০টি গাছ বেঁচে আছে একইভাবে।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
মারা গেছে ‘পবিত্র’ গাছ, শোকে এখনও পাথর ইকুয়েডরের এই পাহাড়ি গ্রাম