‘ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি’ থেকে বাদ ‘ফেয়ার’ শব্দটি, সিদ্ধান্ত হিন্দুস্থান ইউনিলিভারের

মেয়ের গায়ের রং কালো? তাহলে বিয়ে হবে কী করে! অবশ্য বাঙালি মায়েদের কাছে আছে এক চটজলদি সমাধান। ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি আছে তো। মাত্র কয়েকদিনেই ফর্সা গায়ের রং পেতে ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি সবারই 'ভরসা'।

সমাজে এই ক্রিমের পরিচিতির সঙ্গে আজও জড়িয়ে আছে দুটি জিনিস। প্রথমত, পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতা। আর দ্বিতীয়ত, বর্ণ বিদ্বেষ। যে মানসিকতা আমাদের প্রতি মুহূর্তে শেখায়, এগিয়ে থাকতে গেলে ফর্সা হতে হবে। কালো চামড়ার মানুষরা যেন রীতিমতো করুণার পাত্র। অথবা ঘৃণার। ঠিক যে ঘৃণা আমেরিকার মাটিতে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর জন্য দায়ী। তবে এই পরিচয় থেকে এবার বেরিয়ে আসতে চাইছে হিন্দুস্থান ইউনিলিভার কোম্পানি। আর তাই ক্রিমের নাম থেকে ‘ফেয়ার’ শব্দটি বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানি।

মাসখানেক আগে আমেরিকার এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশের নির্মম অত্যাচারে প্রাণ হারান জর্জ ফ্লয়েড। আর এই মৃত্যুর একমাত্র কারণ ছিল তাঁর গায়ের রং। ঘটনার পরে পরেই বিক্ষোভে ফেটে পড়ে আমেরিকা। তারপর ইউরোপ, এশিয়াতেও ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলন। এমনকি ভারতবর্ষের মাটিতে বর্ণবৈষম্যের চেহারাটা অন্যরকম হলেও, এখানেও আন্দোলনের আঁচ এসে পড়তে দেরি হয়নি। রাষ্ট্রীয় নিয়ম নীতির বাইরেও সামাজিক ব্যবহারে যে বৈষম্য আজও থেকে গিয়েছে, তাকেই আক্রমণ করতে চেয়েছেন আন্দোলনকারীরা। আর বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষ তাতে অংশগ্রহণ করেছেন। কোথাও কালো চামড়ার মানুষের নিরাপত্তার জন্য পথ হাঁটছেন সাদা চামড়ার মানুষ, কোথাও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দেখা গিয়েছে পুলিশকেও। আর আন্দোলনের সংহতিতে এগিয়ে এসেছে অনেক বহুজাতিক কোম্পানিও।

হিন্দুস্থান ইউনিলিভার কোম্পানির মুম্বাই শাখার সূত্রে খবর, আমেরিকা থেকে ছড়িয়ে পড়া বর্ণবিদ্বেষ বিরোধী আন্দোলনের পাশে দাঁড়াতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়ে জনসন অ্যান্ড জনসন কোম্পানি যথেষ্ট জনসমর্থন আদায় করে নিতে পেরেছে। এবার সেই তালিকায় নাম তুলতে চলেছে হিন্দুস্থান ইউনিলিভার। কালো চামড়ার মানুষরাও তো সুন্দর হতে পারে। এই বক্তব্যকেই এখন তুলে ধরতে আগ্রহী কোম্পানি। তবে সেইসঙ্গে হয়তো কোথাও এক পরোক্ষ স্বীকারোক্তি থেকে যাচ্ছে, যে কোনো ক্রিম মেখে আদৌ ফর্সা হওয়া যায় না। তাছাড়া ফর্সা হওয়ার খুব প্রয়োজনও তো নেই।

Powered by Froala Editor