শুধু মুসলিম শাসকরাই নন, মন্দির ভাঙার জন্য দায়ী এই হিন্দু রাজারাও

ভারতবর্ষ— এ এক বিচিত্র দেশ। যত গঙ্গা দিয়ে জল গড়িয়েছে, বৈচিত্র্যে এবং ইতিহাসে ততই মিলে মিশে গেছে এই দেশ। সেই কবে থেকে সভ্যতার উদযাপন চলছে এখানে। তৈরি হয়েছে একের পর এক স্থাপত্য। তৈরি হয়েছে বহু মন্দির, দেবালয়। কিন্তু সেইসব কিছু কি এখনও রয়েছে, একইভাবে? না। ভারতের ইতিহাস যেমন স্থাপত্য গড়ার ইতিহাস, তেমনই স্থাপত্য ধ্বংসেরও।

ধর্মীয়, রাজনৈতিক কারণে একসময় বহু স্থাপত্য ধ্বংস করা হয়েছে। প্রচলিত কথা অনুযায়ী, মুসলিম শাসকরা যখনই মসনদে বসেছেন, তখনই ইচ্ছামত ভেঙে ফেলেছেন মন্দির। একেবারে মিথ্যেও নয় সেটা। মুসলিম শাসকদের মন্দির ভাঙার যাবতীয় কাহিনি সেই কবে থেকে আমরা পড়ে আসছি। কালাপাহাড় থেকে মহম্মদ ঘোরী, আওরঙ্গজেব— সবাই কুখ্যাত হয়ে আছেন। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়েরও ধ্বংস বখতিয়ায়র খিলজির হাত ধরে। তবে কেবলমাত্র মুসলমানরাই এই ধ্বংসলীলা চালিয়েছে, সেই ধারণাও একেবারে ভুল। খোঁজ করলে দেখা যাবে, অনেক হিন্দু রাজাও মন্দির, মঠ, স্থাপত্য ভেঙে ফেলেছেন। শুধু ভেঙে ফেলাই নয়, সেখানকার অধিবাসীদেরও হত্যা করেছেন।

গৌড়ের শাসক শশাঙ্কের কথা আমরা সকলেই পড়েছি। ঠিক তেমনই ইতিহাসবিদরা তাঁর বৌদ্ধ-বিদ্বেষের কথাও বলেন। তাঁর রাজত্বকালে বহু বৌদ্ধ মঠ ভেঙে ফেলেন তিনি। শুধু তাই নয়, তাঁর নির্দেশে বহু বৌদ্ধ ভিক্ষুককে হত্যা করা হয়। বঙ্গ থেকে বৌদ্ধ ধর্মকে সমূলে উৎখাত করাই তাঁর অন্যতম চিন্তা ছিল। একা শশাঙ্কই নয়, কাশ্মীরের রাজা হর্ষ, চোল বংশের সম্রাট প্রথম রাজারাজা চোল-সহ আরও বহু হিন্দু রাজা বৌদ্ধ এবং জৈন স্থাপত্য ধ্বংস করেন। কলহনের ‘রাজতরঙ্গিণী’ বইতে কাশ্মীররাজ হর্ষের এই লুঠতরাজ সম্পর্কে সবিস্তারে বলা আছে। শুধু লুঠ নয়, মন্দির ধ্বংস, এমনকি বিগ্রহও ধ্বংস করতেন তিনি। পিছিয়ে ছিলেন না অন্যান্য রাজারাও। গুজরাট আক্রমণকালে পারমার বংশের শাসক সুভাতবর্মন ক্যাম্বে এবং দাভোই-এর বহু জৈন মন্দির লুঠ এবং ধ্বংস করেছিলেন।

কথায় বলে, ইতিহাস আমাদের অতীতকে চিনতে, জানতে শেখায়। খড়ের গাদার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে কত না অজানা তথ্য। কিন্তু সেই ইতিহাসই আমাদের কাছে উঠে আসে একমুখী হয়ে। মুসলিম শাসকদের ধ্বংসলীলার সত্যতার পিছনে বাকিদের কথাও চাপা পড়ে যায়। অথচ তাঁরাও সমানভাবে দোষী। এই সন্ত্রাস কখনও ধর্ম দেখে হয় না।