মসজিদের দেয়ালে এক মনে তুলি টেনে যাচ্ছেন এক প্রৌঢ়। ধীরে ধীরে ফুটে উঠছে কোরানের নানা অধ্যায়। সবই উর্দু ভাষায় লেখা। কিন্তু কাছে গিয়ে শিল্পীর পরিচয় জানতে চাইলে চমকে উঠতে হয়। তাঁর নাম অনিল কুমার চৌহান। বোঝাই যায়, তিনি ধর্মে হিন্দু। তবে শিল্পীর কি কোনো ধর্ম হয়? সেই কথাই যেন মনে করিয়ে দিচ্ছেন অনিল কুমার।
২৫ বছর হয়ে গেল এই কাজ করে যাচ্ছেন অনিল কুমার। আরবি অক্ষরশিল্প যখন রীতিমতো ধুঁকছে, তখন তাকেই বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। কর্মজীবনের শুরুটা অবশ্য হয়েছিল ব্যানার লিখতে লিখতে। আর্থিক অনটনের কারণে তখন তাঁকে ছেড়ে আসতে হয়েছে ফাইন আর্টস বিষয়ে পড়াশোনা। কিছু রোজগারের আশায় হায়দ্রাবাদের চারমিনারের কাছে একটি ব্যানার লেখার কারখানায় যোগ দিলেন। হিন্দি, ইংরেজি, তামিল প্রতিটা ভাষাই তাঁর জানা। কিন্তু উর্দু ভাষা তখনও জানেন না অনিল কুমার। প্রথম প্রথম নমুনা দেখে দেখে লিখতেন। আর তখনই হঠাৎ মনে হয়, উর্দু অক্ষরের মধ্যে এক শৈল্পিক চরিত্র আছে।
সেই শুরু। ধীরে ধীরে শুরু করলেন উর্দু ভাষা শেখা। সেই ১৯৯৫ সাল থেকেই শুরু হল উর্দু অক্ষরশিল্পের কাজ। হায়দ্রাবাদের নানা মসজিদে কাজ করেছেন তিনি। অবশ্য একজন হিন্দু মসজিদের দেয়ালে কোরানের অধ্যায় লিখছেন, এটা অনেকেই মেনে নেননি সহজে। আবার কেউ কেউ পাশে এসেও দাঁড়িয়েছেন। ঠিক যেমন সমস্ত বিরোধিতার উল্টোদিকে দাঁড়িয়েছিলেন জামিয়া নিজামিয়া। তবে শুধুই মসজিদ নয়, হায়দ্রাবাদের হনুমান মন্দিরের গায়েও পুরাণের দৃশ্য এঁকেছেন অনিল কুমার। সমস্ত ধর্মই তাঁর কাছে একইরকম পবিত্র। সব ধর্মের সহাবস্থানে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন তিনি। আর নিজের জীবন ও শিল্প দিয়ে সেই বিশ্বাসকেই ছড়িয়ে দিচ্ছেন অনিল কুমার চৌহান।
Powered by Froala Editor