প্রতিদিন একটু একটু করে বেড়ে চলেছে পৃথিবীর উষ্ণতা। গলছে হিমবাহের বরফ। শুধুই মেরু অঞ্চল নয়, হিমালয়ের গঙ্গোত্রী এবং যমুনোত্রীর মতো হিমবাহেও একই ছবি উঠে এসেছে সম্প্রতি। তবে এর পিছনে কারণ খুঁজতে গিয়ে নানারকম তত্ত্বের অবতারণা করেছেন বিজ্ঞানীরা। গ্রিন-হাউস এফেক্ট তো বটেই, সেই সঙ্গে ধূলিকণার দিকেও স্পষ্ট ইঙ্গিত তাঁদের।
ধূলিকণা? শুনলে আশ্চর্য ঠেকতে পারে। বরফ গলার সঙ্গে ধূলিকণার সম্পর্ক কী? বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, বাতাষে দূষণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ধূলিকণার পরিমাণ। আর বায়ুস্রোতের প্রভাবে সেইসব ধূলিকণা ক্রমশ বেশি উচ্চতার দিকে সরে যাচ্ছে। এভাবেই এশিয়া ও আফ্রিকা থেকে বিপুল পরিমাণ ধূলিকণা ভিড় করছে হিমালয়ের শিখরচূড়ায়। এর ফলেই বাড়ছে বরফ গলনের পরিমাণ। বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় অ্যালবেডো এফেক্ট। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ধূলিকণাহীন বরফের তুলনায় ধূলিকণাযুক্ত বরফের সূর্যরশ্মি প্রতিফলনের ক্ষমতা অনেক কম। আর তার ফলে উষ্ণতার বৃদ্ধিও অনেক বেশি। আর এর ফলে বরফ গলনের পরিমাণও বাড়ছে।
সম্প্রতি ‘নেচার ক্লাইমেট চেঞ্জ’ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন পরিস্থিতি এভাবে এগোতে থাকলে খুব বেশিদিন টিকবে না হিমালয় পর্বতের হিমবাহগুলি। আর এই সমস্ত হিমবাহের জলের উপর নির্ভর করে থাকেন অন্তত ৭০ কোটি মানুষ। দক্ষিণ এশিয়া এবং চিনের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের কৃষিকাজের জন্য প্রয়োজনীয় জলের সবচেয়ে বড় উৎস হিমালয় পর্বত। একদিকে গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র সমভূমি অন্যদিকে হোয়াং-হো এবং ইয়াং-সি-কিয়াং নদী উপত্যকাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে বিস্তীর্ণ উর্বর অঞ্চল। হিমালয়ের বরফ গলে গেলে এই অঞ্চলের কৃষিকাজের ভবিষ্যতও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এমনকি এখনও বহু মানুষের পানীয় জলের উৎসও হিমবাহের বরফগলা জল। তবে এই উৎসকে বাঁচিয়ে রাখতে গেলে ধূলিকণার উৎস খুঁজে পেতে হবে। কলকারখানা এবং মোটরগাড়ির ধোঁয়ার সঙ্গে মিশে থাকা কার্বনের কণা একটি উৎস। তবে তার থেকেও বড়ো কোনো উৎস রয়েছে বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। আর তার সন্ধান পেতে গেলে প্রয়োজন আরও গভীর গবেষণার।
Powered by Froala Editor