ময়দানের খোলা হাওয়ায় বিকেল কাটাতে কাটাতে অনেকেই হয়তো খেয়াল করেছেন হঠাৎ মাঠ জলে ভরে ওঠে। আবার বর্ষার জল নেমেও যায় বেশ তাড়াতাড়ি। কিন্তু এর পিছনে রহস্য যে কী, তা এতদিন একরকম গোপন ছিল। সম্প্রতি কলকাতা পৌর সংস্থার একটি প্রকল্পের কারণেই সেই রহস্য এবার জনসমক্ষে উঠে আসতে চলেছে। প্রকল্পটি অবশ্য ময়দানকেন্দ্রিক নয়। বরং এই প্রথম গাঁইতি-শাবলের ঘা পড়তে চলেছে রেড-রোডে। আর ২০১ বছরের পুরনো এই ঐতিহাসিক রাস্তার নিচেই আছে এক অদ্ভুত নিকাশি ব্যবস্থা। একটি নয়, পাশাপাশি দুটি ইঁটের তৈরি কালভার্টের একদিকের মুখ রয়েছে হুগলি নদীতে, আর অন্যদিক ময়দানের মোহনবাগান তাঁবুর কাছে।
চলতি বর্ষায় দেখা যায় ময়দানের জল বেশ কিছুক্ষণ জমে থাকছে। এমনিতে এমনটা হওয়ার কথা নয়। রেড-রোডের উপরের নিকাশি ব্যবস্থা মেরামতির কিছু চেষ্টাও করা হয়েছে ইতিমধ্যে। তবে তাতে সমস্যার সমাধান হয়নি। ফলে পৌরসভার ইঞ্জিনিয়াররা বুঝতে পারেন, সমস্যা রয়েছে মাটির গভীরে। ২০১ বছর আগে রেড-রোড তৈরির সময়েই যে জোড়া টানেল তৈরি হয়েছিল, সেই টানেলেই কোনো সমস্যা দেখা দিয়েছে। আর এবার সেই টানেল মেরামতের জন্যই খুঁড়ে ফেলা হবে রেড রোড।
যদিও এখনও পর্যন্ত এই প্রকল্পের খুঁটিনাটি সম্বন্ধে আর কিছুই বলতে চাননি পৌরসভার কোনো আধিকারিক। কারণ আজও এই সমস্ত ব্রিটিশ নির্মাণশৈলী গোপনীয় তথ্য হিসাবেই বিবেচিত। তবে জানা গিয়েছে দুই শতাব্দীপ্রাচীন এই টানেলদুটির খোলনলচে অনেকটাই বদলে ফেলা হবে। খিলান আকৃতির ইটের টানেলের জায়গায় এবার তৈরি হবে কংক্রিটের সমান্তরাল টানেল। তবে দুই টানেলের প্রযুক্তিতে কোনো পরিবর্তন আনা হবে না বলেই জানিয়েছেন ইঞ্জিনিয়াররা। ফলে বর্ষার জল যথারীতি ময়দান থেকে চলে যাবে হুগলি নদীর গর্ভে। আবার জোয়ারের সময় হুগলি নদী থেকে জল এসে পড়বে ময়দানের ঘাসে। ২০১ বছর আগে ইঞ্জিনিয়াররা এমন পরিকল্পনা করেছিলেন, ভাবতে সত্যিই অবাক লাগে। হয়তো কলকাতার আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে আছে এমন আরও অনেক বিস্ময়, যা চাপা পড়ে আছে গোপনীয় নথির ফাইলে।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
কলকাতার বুকে ‘লেখক ব্যাঙ্ক’, তিন দশক আগে উদ্যোগ নিয়েছিলেন সন্দীপ দত্ত