বাঁদরের গলায় মুক্তোর মালা— এই প্রবাদ সকলেরই জানা। কিন্তু ইঁদুরের গলায় সোনার পদক? হ্যাঁ, বছর খানেক আগে বীরত্বের জন্য ‘মেডেল অফ অনার’ সম্মান পেয়েছিল সামান্য একটি ইঁদুর। কথা হচ্ছে কম্বোডিয়ার সামরিক ‘তারকা’ মগবাকে (Magawa) নিয়ে। বিগত পাঁচ বছর ধরে কম্বোডিয়ার সেনাবাহিনীর অবিচ্ছেদ্য অংশ ছল মগবা। বাঁচিয়েছে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ। সম্প্রতি ৮ বছর বয়সে চিরবিদায় নিল এই ‘তারকা’ ইঁদুর (Hero Rat)।
২০১৬ সালে জায়েন্ট আফ্রিকান র্যাট প্রজাতির ইঁদুরটি চাকরি পেয়েছিল কম্বোডিয়ার জাতীয় সামরিক বাহিনীতে। মাইন শনাক্তকরণ বিভাগ ‘কম্বোডিয়ান মাইন অ্যাকশন সেন্টার’-এই সে কাজ করেছে দীর্ঘ পাঁচ বছর। আর এই পাঁচ বছরেই সে বাঁচিয়েছে কয়েক হাজার মানুষের প্রাণ। সব মিলিয়ে প্রায় ১০০টিরও বেশ ল্যান্ডমাইন ও ৩৮টি অন্যান্য বিস্ফোরক পদার্থ চিহ্নিত করেছে মগবা।
ল্যান্ডমাইন শনাক্ত করার জন্য অন্যান্য দেশের সেনাবাহিনীতে সাধারণত কুকুর ব্যবহার করা হয়। তবে কম্বোডিয়া-সহ আরও বেশ কিছু দেশে কুকুরের পরিবর্তে ইঁদুর দিয়েই করা হয় এই কাজ। আর তার অন্যতম কারণ হল ছোট্ট প্রাণীটির ওজন। কুকুরের ওজন বেশি হওয়ায় অনেক সময়ই তার পায়ের চাপে দুর্ঘটনা ঘটে যায়। তাতে সামরিক প্রাণীটির প্রাণ তো যায়ই, পাশাপাশি বিপুল ক্ষয়ক্ষতিরও সম্মুখীন হয় সেনাবিভাগ। পাশাপাশি অসম্ভব দ্রুততার সঙ্গে এই কাজটা করতে পারে ইঁদুর। তাই কুকুরের বিকল্প হিসাবে স্নিফিং র্যাট ব্যবহার করা হয় কম্বোডিয়ায়।
মগবার জন্ম ২০১৪ সালে। তানজানিয়ায়। ২০১৬ সালে সেখানকার অ্যাপোপো নামের একটি সংস্থার থেকে কম্বোডিয়ার সামরিক বিভাগ দত্তক নেয় মগবাকে। শুধু কম্বোডিয়াই নয়, আফ্রিকার একাধিক দেশেই মাইন শনাক্তকরণে সক্ষম প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইঁদুর সরবরাহ করে থাকে অ্যাপোপো। তবে মাইন শনাক্তকরণে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সাফল্য পেয়েছে মগবাই। আর সেই কারণেই দৈত্যাকার ইঁদুরটিকে দেওয়া হয়েছিল বিশেষ সম্মাননা।
গত বছরই দীর্ঘ সামরিক ক্যারিয়ারে ইতি টেনেছিল মগবা। বা বলা ভালো, বার্ধক্যের জন্য তাকে চিরন্তন ছুটি দিয়েছিল কম্বোডিয়ান সামরিক বিভাগ। অবসর গ্রহণের পরও, সেনা বাহিনীর পরিচর্যাতেই এতদিন ছিল মগবা। সেনা আধিকারিকদের সঙ্গে এক অন্যরকম সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তার। সেইসঙ্গে অন্যান্য স্নিফিং ইঁদুরদের ‘উপদেষ্টা’ হিসাবে কাজ করত সে। মগবার শান্তিপূর্ণ প্রয়াণেও যেন বিষাদের ছায়া নেমে এসেছে কম্বোডিয়ার সেনাবাহিনীর মধ্যে…
Powered by Froala Editor