পাচারের মুখ থেকে ফিরে আসা মহিলাদের খাদ্যদ্রব্য দিয়ে সাহায্য, মানবিক উদ্যোগ বাসন্তীতে

সমাজ ও পরিস্থিতি তাঁদেরকে ক্রমশ পেছনে ঠেলে দিয়েছে। জীবনে অনেক সমস্যা ছিল, নানা গোলকধাঁধায় জড়িয়ে পড়েছিলেন। সেখান থেকে অত্যাচার, নির্যাতন, অথবা পাচার। তাঁদের তো দোষ নেই, কিন্তু আমাদের ‘মহান’ সমাজ যে একঘরে করে রেখেছে। করোনার এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে কী করছেন ওই মানুষগুলো? ঠিক মতো খেতেও হয়তো পারছেন না। এমন অবস্থায় তাঁদের কাছে পৌঁছে গেল সাহায্য। আয়োজনে গরানবোস গ্রাম বিকাশ কেন্দ্র (জিজিবিকে) এবং বন্ধনমুক্তি সংস্থা।

দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার বারুইপুরের বাসন্তী থানা এলাকা ও পরে ক্যানিংয়ে সম্প্রতি এমনই উদ্যোগ নেওয়া হল। ‘বন্ধনমুক্তি’ সংস্থাটি মূলত এই পাচারচক্র থেকে উদ্ধার পাওয়া মানুষদের নিয়ে কাজ করে। তাঁদের সুরক্ষা, আর্থিক অবস্থার দিকে নজর রাখে। করোনা ও লকডাউনের পরিস্থিতিতে এমনিতেই সমস্ত জায়গা বন্ধ। দোকান বাজার বেশিরভাগেরই ঝাঁপি নামানো, সামান্য কিছু খুলছে। গ্রামের দিকে অবস্থা আরও ভয়াবহ। এমন পরিস্থিতিতে এই মানুষগুলো চূড়ান্ত অসুবিধায় পড়েছে। একে পরিস্থিতি এমনিতেই সঙ্গিন ছিল। পাচার হওয়া থেকে কোনোক্রমে বেঁচে পালিয়ে এসেছেন এঁরা। কেউ কেউ আবার পারিবারিক নিগ্রহের শিকার। এই অসহায় মানুষগুলো তো কোনো অন্যায় করেননি। বরং তাঁরা অন্যায়ের শিকার হয়েছিলেন। তাঁদেরকেই একঘরে ঠেলে দেয় সমাজ। লকডাউনের পরিস্থিতিতে আরও অসহায় হয়ে পড়েছেন তাঁরা।

সেই অবস্থাতেই এগিয়ে এসেছেন এই সংস্থাগুলো। সঙ্গে রয়েছে স্থানীয় পুলিশ, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা। বাসন্তী ও ক্যানিং— দুটি জায়গা থেকে মোট ২১৪ জন মানুষকে ত্রাণ দেওয়া হয়। ত্রাণ সামগ্রীর মধ্যে ছিল ২৫ কেজি চাল, ১৫ কেজি আলু, দুই কেজি করে তেল আর ডাল-সহ যাবতীয় রেশনের সরঞ্জাম; সেইসঙ্গে নগদ ৩০০ টাকা। প্রত্যেককে এটা দেওয়া হয়। এছাড়াও সঙ্গে ছিল স্যানিটাইজার আর মাস্ক। প্রথমে অনেকেই লকডাউন মানছিলেন না। অসুস্থ হলেও লুকিয়ে রাখছিলেন তা। কিন্তু সবার সম্মিলিত প্রয়াসে সেখানে সুস্থ ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা হয়। এছাড়াও, যে-সমস্ত জায়গায় সহজে পৌঁছতে পারছিল না সংস্থাগুলো, সেখানে পুলিশ সাহায্য করেছে।

সমস্ত মিলে, সবাই যাতে ঠিক থাকে, সেই চেষ্টাই করছে প্রত্যেকে। বিশেষ করে এই মানুষগুলো, যারা এমনিই পেছনের সারিতে রয়েছে কোনো অপরাধ ছাড়াই, তাঁরা যাতে সুস্থ স্বাভাবিক জীবন ফিরে পায়, সেটাই লক্ষ্য হওয়া উচিত আমাদের। যাতে একজন দুইজন নয়, সবাইকে নিয়ে এই সমাজ বাঁচতে পারে। সবাই যাতে সুস্থভাবে ফিরে আসতে পারে এই স্রোতে।