বাড়িতে পোষ্য রাখলে জেল হতে পারে এই দেশে!

বছর দুয়েক আগের কথা। ইরান ঘোষণা করেছিল, কুকুর নিয়ে রাস্তায় বেরলেই নেমে আসবে শাস্তির খাঁড়া। ইরানের সেই আইনে যথেষ্ট হেনস্থার শিকার হয়েছিলেন পোষ্য মালিকেরা। এবার ফের ধর্মীয় ফতোয়ার শিকার হলেন তাঁরা। যে-কোনো রকম পোষ্য পালনই নিষিদ্ধ করার পথে এগোতে চলেছে ইসলামিক দেশটি। 

কুকুর, বিড়াল, কচ্ছপ, খরগোশ, ইঁদুর-সহ যে-কোনো ধরনের পোষ্য প্রাণীর আমদানি, কেনা-বেচা, পরিবহন এবং প্রতিপালনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে চলেছে ইরান। এই তালিকায় রয়েছে কুমিরের নামও। প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী, যাঁরা ইতিমধ্যে কোনো না কোনো পোষ্যের মালিক, বিশেষ কমিটির থেকে অনুমতি নিতে হবে তাঁদেরও। অন্যথায় ৮০০ ডলার জরিমানা করা হবে নাগরিকদের। তাছাড়াও সশ্রম কারাদণ্ডের ব্যাপারেও ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে ইরান প্রশাসন। 

তবে আজ নয়। এই বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছিল এক দশক আগে। ২০১১ সালে একদল ইরানি সংসদ প্রথম প্রস্তাব রেখেছিলেন, দেশের সমস্ত কুকুর বাজেয়াপ্ত করে ছেড়ে দেওয়া হোক ধু-ধু মরুভূমিতে। সেই বিল আইন হিসাবে অনুমোদন না পেলেও, সে-দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তেমনই অমানবিকতার দিকে এগোচ্ছে, তাতে আর সন্দেহ কই?

এখানেই সমস্যার শেষ নয়। ইরানের পোষ্য মালিকদের অনুমতিগ্রহণের প্রক্রিয়াও বেশ কঠিন। প্রশাসনের কাছে আবেদন করার পর, কবে সেই অনুমোদন মিলবে তা নিশ্চিত করে কিছুই বলা হচ্ছে না পোষ্য মালিকদের। এভাবেই লাল সুতোর ফাঁসে পড়েছেন বহু মানুষ। এমনকি অভিযোগ উঠছে, প্রশাসনিক কাজ চলাকালীন পোষ্যদের বাজেয়াপ্ত করে রাখা হচ্ছে পৃথক স্থানে। যথাযথ খাদ্য-পানীয়ের বন্দোবস্তও করা হচ্ছে না তাদের জন্য। অন্যদিকে বিদেশি পোষ্য খাদ্য আমদানি বন্ধ করায়, সমস্যা বেড়েছে পোষ্য মালিকদেরও। 

আরও পড়ুন
প্রাণীদের সঙ্গে কথপোকথন, পোষ্যের ভাষা শেখাচ্ছেন মার্কিন মহিলা

আশ্চর্যের বিষয় হল, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলির মধ্যে সর্বপ্রথম ইরানই ১৯৪৮ সালে চালু করেছিল পশু কল্যাণ আইন। পোষ্যের অধিকার নিশ্চিত করতে প্রচারের জন্য বড়ো অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করেছিল তৎকালীন সরকার। এমনকি ইরানের রাজপরিবারেও পোষ্য কুকুর পালনের রেওয়াজ ছিল। 

আরও পড়ুন
পোষ্য পাচারের জেরে সংকটে ভারতের সবচেয়ে ‘সুন্দর’ কচ্ছপ

১৯৭৯ সালে ইসলামিক বিপ্লবের পর শাহ মহম্মদ রেজা পাহলভিকে উৎখাত করা হয়। সেইসময় থেকেই অবিচার শুরু হয় কুকুরের প্রতি। কারণ, কুকুরের প্রতিপালন নাকি অবমাননা করে ইসলামের। এর পর প্রায় পাঁচ দশক কেটে গেলেও, বদলায়নি মানসিকতা। ইরানের এই নতুন আইন এবার ফের চিন্তার দুনিয়ায় ঠেলে দিল পশুপ্রেমীদের। অনেকে তাঁদের অধিকার নিয়ে সরব হয়েছেন ঠিকই, তবে সমস্ত প্রতিবাদই যে কঠোর হাতে দমন করবে সরকার, তা একপ্রকার নিশ্চিত…

আরও পড়ুন
পোষ্য দেখভালের পরিবর্তে থাকা-খাওয়া, আশ্চর্য অভিজ্ঞতা ভূপর্যটক দম্পতির

Powered by Froala Editor