১৯৯৫ সাল। ভয়াবহ বন্যা বিধ্বস্ত করেছিল হরিয়ানার সোনিপথ অঞ্চলকে। ভেসে গিয়েছিল রাস্তা-ঘাট, মাথার ছাদ হারিয়েছিলেন বহু মানুষ। সে-সময় গৃহহীন মানুষদের আশ্রয়দাতা হয়ে উঠেছিল কিছু গাছ। সালভাদোরা ট্রি। হরিয়ানার (Haryana) সোনিপথ-জুড়ে দেখা মেলে এই বিশেষ প্রজাতির মহীরুহ বৃক্ষের। বন্যার সময়ে এই গাছে আশ্রয় নিয়েই মৃত্যুর মুখ থেকে রেহাই পেয়েছিলেন বহু মানুষ। এবার তাদের ‘দুর্দিনে’ গণ-প্রতিবাদে নামলেন গ্রামবাসীরা।
হ্যাঁ, দুর্দিনই বটে। সোনিপথের (Sonipath) গোহানা মহুকুমার গ্রাম থাস্কা। সবমিলিয়ে এই গ্রামে রয়েছে কয়েক হাজার সালভাদোরা গাছ। যাদের মধ্যে কারোর কারোর বয়স একশোরও বেশি। সরকারি প্রকল্প এবং ভবন নির্মাণের জন্য এ-ধরনের বেশ কয়েকটি গাছ কেটে ফেলার পরিকল্পনা করেছে রাজ্য সরকার। আর এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করেই প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন গ্রামবাসীরা। প্রাচীন ‘আশ্রয়দাতা’-দের মৃত্যুকে বরদাস্ত করতে নারাজ অধিকাংশ প্রবীণ বাসিন্দাই।
অবশ্য সরকারের এই পরিকল্পনা নতুন নয়। ২০২২ সালের মাঝামাঝি সমবায় পরিষেবা, বিপণন কেন্দ্র এবং পুলিশ বিভাগ প্রতিষ্ঠার জন্য গ্রাম পঞ্চায়েতের কাছে জায়গার প্রদানের জন্য অনুরোধ করেছিল হরিয়ানা সরকার। সেই আবেদনের ভিত্তিতেই গত মার্চ মাসে রাজ্য সরকারের এই প্রকল্পের জন্য ১৫ একর জমি বরাদ্দ করে থাস্কা গ্রাম পঞ্চায়েত। তবে সরকারি নির্মাণ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ এই জমি পরিত্যক্ত বা কৃষিজমি নয়। বরং, তা অরণ্যের অংশ। ফলে, এই প্রকল্প আনুষ্ঠানিকভাবে পাশ হওয়ার পর থেকেই বিরোধিতায় সরব হন গ্রামবাসীদের একাংশ।
ভারতের মধ্যে সর্বনিম্ন বনভূমির হার দেখা যায় যে-সকল রাজ্যে, সেই তালিকাতেই রয়েছে হরিয়ানা। তবে অরণ্যের উপস্থিতির ক্ষেত্রে সোনিপথে একমাত্র ব্যতিক্রম থাস্কা গ্রাম। থাস্কার রেকর্ড অনুযায়ী, গ্রামে সবমিলিয়ে ১২০০ পরিবারের বাস। অন্যদিকে বনভূমির পরিমাণ ১০০ একর। আর এই বনভূমি সংরক্ষণের নেপথ্যে রয়েছেন গ্রামবাসীরাই।
১৯৬০-এর দশকে উন্নয়ন এবং নগরায়নের জন্য গ্রামবাসীদের মধ্যে বনভূমি বন্টনের প্রস্তাব রেখেছিল হরিয়ানার রাজ্য সরকার। সে-সময় সরকারের এই পদক্ষেপকে তীব্র বিরোধিতা করেন গ্রামবাসীরা। শেষে প্রতিবাদের চাপে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এই অরণ্য ব্যবহৃত এবং সংরক্ষিত হবে পশুদের চারণভূমি হিসাবে। বাণিজ্যিক কার্যকলাপের জন্য এই জমি বিক্রি করা যাবে না।
অবশ্য গ্রামের উন্নয়নের জন্য যে নতুন নির্মাণ, পরিকাঠামো প্রয়োজন— তা নিয়ে কোনো বিরোধ নেই গ্রামবাসীদের। সেই প্রেক্ষিতেই অরণ্যের তুলনামূলকভাবে ‘ফাঁকা’ ১৫ একর জমি সরকারের হাতে তুলে দিয়েছিল গ্রাম পঞ্চায়েত। তবে এই প্রকল্পের জন্য যে সেখানে অবস্থিত গুটি কয়েক মহীরুহকেও কেটে ফেলার পদক্ষেপ নেবে সরকার— তা ঠাহর করতে পারেননি কেউ-ই। গ্রামবাসীদের কথায়, সালভাদোরা গাছ যেমন বহু প্রাণীর আশ্রয়কেন্দ্র, তেমনই ব্যাকটেরিয়ারোধী বা হাইপোলিপিডেমিক ক্ষমতা রয়েছে এই গাছের। ফলে, এ-ধরনের গাছ কেটে ফেলার মাশুল গুনতে হবে প্রকৃতিকে। প্রভাবিত হবে প্রাকৃতিক ভারসাম্য। প্রশ্ন থেকে যায়, এই গাছগুলিকে বাঁচিয়ে রেখে বা সংরক্ষণ করে কি নির্মাণ সম্ভব নয় বাকি জমিতে? উত্তর খুঁজছেন গ্রামবাসীরা। ইতিমধ্যে সোনিপথের বনবিভাগের আধিকারিকের কাছে বিশেষ স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন থাস্কার গ্রামবাসীরা। যদিও শেষ অবধি কী পরিণতি হবে শতাব্দীপ্রাচীন ত্রাণদাতাদের— তা এখনও পরিষ্কার নয় কারোর কাছেই।
Powered by Froala Editor