ভারতজুড়ে ক্রমশ বাড়ছে পানীয় জলের সমস্যা। ভূগর্ভস্থ জলের জলতল কমে যাচ্ছে ক্রমশ। খরার কারণে বিপন্ন হচ্ছে চাষাবাদ। তবে এর ঠিক উল্টোপুরাণ হরিয়ানায়। সারাবছরই সেখানে জল জমে থাকছে (Waterlogging) কৃষিক্ষেত্রে। ফসল ফলানোই একপ্রকার দুষ্কর হয়ে উঠেছে স্থানীয় কৃষকদের পক্ষে। কোথাও আবার ফসল ফললেও দ্রুত পচে যাচ্ছে শস্য। ফলে বাধ্য হয়েই কৃষিকাজ ছাড়ছেন হরিয়ানার অধিকাংশ কৃষক।
মূলত হরিয়ানার (Haryana) চারখি দাদরি জেলা এই ব্যতিক্রমী ঘটনার শিকার। রাজ্য কৃষি দপ্তরের সমীক্ষা অনুযায়ী, এই জেলার ৮০ হাজার একরের মধ্যে সাড়ে ১০ হাজার একর জমিই জলমগ্ন হয়ে রয়েছে সারা বছর। উল্লেখ্য, এই সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছিল ২০২১ সালে। ২০১৭ সালে সংখ্যাটা ছিল ৯ হাজারের কাছাকাছি। অর্থাৎ, হরিয়ানার এই জেলায় বছরে ৩-৪ শতাংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে জলাভূমির পরিমাণ। ঝাঁঝর এবং রোহতাক জেলার পরিস্থিতিও অনেকটা একই রকম। কিন্তু এই অদ্ভুত ঘটনার কারণ কী? তার প্রতিকারই বা কী?
কৃষি দপ্তরের রেকর্ড বলছে, হরিয়ানায় কৃষিজমিতে জল জমা নতুন কোনো ঘটনা নয়। চারখি দাদরি, ঝাঁঝর, রোহতাকের মতো জেলাগুলি আদতে নিম্নভূমি। ফলে বর্ষাকালে খুব সহজেই প্লাবিত হয় এই অঞ্চলগুলি। পার্শ্ববর্তী জেলা থেকেও জল এসে জমা হয় সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে। কিন্তু ২০০৭-০৮ সাল থেকে এই সমস্যা চিরস্থায়ী হয়ে ওঠে। আর তার জন্য খানিকটা দায়ী কৃষকরাই।
বছরে হরিয়ানায় প্রায় ৬৮ লক্ষ মেট্রিক টন চাল উৎপাদিত হয়। তার মধ্যে ২৫ লক্ষ মেট্রিন টন বাসমতী চাল। এই বিশেষ প্রজাতির ধান প্রচুর পরিমাণ জল শোষণ করে। বলতে গেলে ভূগর্ভস্থ জল টেনে আনা মাটির উপরের স্তরে। ফলে, ভূগর্ভস্থ জলতলের মাত্রা ক্রমশ কমে যায়। যেখানে ভূগর্ভস্থ জলতলের স্বাস্থ্যকর গভীরতা হওয়া উচিত ৫ মিটার। সেখানে হরিয়ানার ওয়াটার টেবিলের গভীরতা মাত্র ১.৫-৩ মিটারের কাছাকাছি। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, তবে কি এর আগে বাসমতী চালের চাষ হত না হরিয়ানায়?
হ্যাঁ, হত। বাসমতী চাল চাষের মরশুমে কর্দমাক্ত থাকত কৃষিজমি। তবে প্রতি ঋতুতে ভিন্ন ভিন্ন ফসল উৎপাদনের কারণে সেই প্রভাব চিরস্থায়ী হত না। বাসমতী চাল বেশি লাভজনক এবং আধুনিক প্রযুক্তির দৌলতে তার বীজ সারাবছর উপলব্ধ হওয়ায়— কৃষি জমিতে অন্যান্য ফসলের উৎপাদন প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিলেন হরিয়ানার কৃষকরা। তারই মাশুল গুনতে হচ্ছে এখন তাঁদের। সারাবছর জমিতে জল জমে থাকায় বীজ রোপণ করা থেকে ফসল ফলানো সবটাই অসম্ভব হয়ে উঠেছে। এমনকি কৃষিজমিতে ট্রাক্টর চালানোও এখন রীতিমতো দায়। সেইসঙ্গে জমিতে লবণের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে উর্বরতাও। কিন্তু কিছুই কি প্রতিকার নেই এই ঘটনার?
২০২০ সালে ‘মেরা পানি, মেরা বরিষৎ’ প্রকল্প চালু করেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খাট্টর। বাসমতী চাল ছেড়ে অন্যান্য দানা শস্য উৎপাদনে কৃষকদের আগ্রহী করে তুলতেই এই প্রকল্প। সার, কৃষি বীজ ও অন্যান্য নানা ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হচ্ছে এই প্রকল্পের আওতায়। তাতে জলাজমির বৃদ্ধি ঠেকানো যাবে ঠিকই। কিন্তু আদৌ কি পুনরুদ্ধার করা যাবে হারিয়ে যাওয়া জমিগুলি? এই বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য ভূ-বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বিশেষ বেঞ্চ তৈরি করেছে হরিয়ানা। তবে এখনও পর্যন্ত কোনো সমাধান খুঁজে বার করা সম্ভব হয়নি তাঁদের পক্ষে…
Powered by Froala Editor