ক্রমাগত পরিবেশ দূষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে একটু একটু করে হারিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতি। যে-কোনো প্রজাতির বিলুপ্তিই বাস্তুতন্ত্রের পক্ষে মারাত্মক। কিন্তু পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এক বা একাধিক উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল। তবুও উদ্ভিদ বিলুপ্তি নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয় না এখনও। এর মধ্যেই প্রকাশিত হল এতদিন পর্যন্ত উদ্ভিদ সুরক্ষা বিষয়ক সর্বাধিক তথ্যনির্ভর একটি গবেষণাপত্র। সেই গবেষণাপত্রে বিজ্ঞানীদের দাবি, পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে হারিয়ে যেতে পারে প্রায় অর্ধেক উদ্ভিদ প্রজাতি।
পৃথিবীর ৮৪টি দেশের বিজ্ঞানীরা মিলে প্রস্তুত করেছেন ‘দ্য স্টেট অফ ওয়ার্ল্ড ট্রিজ রিপোর্ট’ শীর্ষক এই গবেষণাপত্র। আর তাতে দেখা গিয়েছে, সারা পৃথিবীতে ১৭৫১০টি উদ্ভিদ প্রজাতি বিলুপ্তির দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। যা বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীর সংখ্যার প্রায় দ্বিগুণ। এবং বিজ্ঞানীদের জানা সমস্ত উদ্ভিদ প্রজাতির প্রায় ৩০ শতাংশ। তবে এই সংখ্যাটিও প্রকৃত নয় বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। কারণ ৭.১ শতাংশ প্রজাতিকে সম্ভাব্য বিলুপ্তপ্রায় হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়াও ২১.৬ শতাংশ উদ্ভিদ প্রজাতি সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। মাত্র ৪১ শতাংশের কিছু বেশি সংখ্যক প্রজাতিকে আপাতত সুরক্ষিত বলে চিহ্নিত করা যেতে পারে।
পরিবেশ দূষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি ক্রমাগত কৃষিজমি সম্প্রসারণকেও অরণ্য ধ্বংসের অন্যতম বড়ো কারণ হিসাবে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। যেভাবে জনসংখ্যা বাড়ছে, তাতে খাদ্যের যোগান বাড়াতে কৃষিজমি সম্প্রসারণ করতেই হচ্ছে। পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন বাণিজ্যিক সংস্থার অধিক মুনাফালাভের আশায় অপ্রয়োজনীয় শস্য উৎপাদনের প্রবণতাও। এর ফলে বহু অরণ্যই হারিয়ে গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। সবচেয়ে বেশি সংকটে রয়েছে ক্রান্তীয় অঞ্চলের অরণ্যগুলি। বিশেষ করে এখানে রোজউড, আয়রনউড, এবোনির মতো বড়ো গাছগুলির সংখ্যা কমছে। অথচ ক্রান্তীয় অরণ্যের বাস্তুতন্ত্রে এদের প্রভাবই সবচেয়ে বেশি।
অরণ্যের আয়তনের দিক থেকে গত ৫ বছরে সবচেয়ে বেশি গাছ কাটা হয়েছে মাদাগাস্কার অঞ্চলে। প্রসঙ্গত, এই গবেষণাপত্র প্রকাশের সময়েই মাদাগাস্কারের মানুষ ইতিহাসের সবচেয়ে বড়ো দুর্ভিক্ষের মুখে এসে দাঁড়িয়েছেন। আর তার কারণ অনাবৃষ্টি। তবে সবচেয়ে বেশি প্রজাতি সংকটে রয়েছে চিনে। এখানে উদ্ভিদ প্রজাতির বৈচিত্র্যও সবচেয়ে বেশি। চিনের অন্তত ৯৫০টি স্থানীয় প্রজাতি বিলুপ্তির মুখে এসে দাঁড়িয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য উপযুক্ত পরিকল্পনার পাশাপাশি প্রয়োজন সচেতনতা তৈরিও। অবিলম্বে সেই প্রক্রিয়া শুরু না হলে যে গোটা পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রই শেষ সীমায় এসে দাঁড়াবে, সে-কথা বলাই বাহুল্য।
আরও পড়ুন
আঠালো তরলেই পতঙ্গশিকার, নতুন মাংসাশী উদ্ভিদের সন্ধান পেলেন গবেষকরা
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
আন্টার্কটিকায় নতুন উদ্ভিদ প্রজাতি আবিষ্কার ভারতীয় গবেষকের