তরুণ প্রজন্মকে চাকরির সুযোগ প্রদান এবং কর্মসংস্থানের বিকাশ— এই দুই বিষয়কে সামনে রেখে ক্ষমতায় এসেছে বর্তমান কেন্দ্র সরকার। তবে ৮ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরেও বদলায়নি পরিস্থিতি। ক্রমশ সংকটময় হয়ে উঠেছে চাকরির জগৎ। হতাশাগ্রস্ত হয়ে চাকরি পাওয়ার আশা ছেড়েছেন অধিকাংশ তরুণ-তরুণী। সম্প্রতি এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল সমীক্ষায়। এমনকি অদূর ভবিষ্যতে ৯০ কোটি শ্রমশক্তির (Workforce) অধিকাংশটাই হারাতে চলেছে ভারত (India)।
মুম্বাইয়ের বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর মনিটারিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি প্রাইভেট লিমিটেডের নতুন তথ্য জানাচ্ছে এমনটাই। শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি না পাওয়ায়, হতাশ হয়েই কর্মক্ষেত্র থেকে সরে আসছেন লক্ষ লক্ষ ভারতীয়। আর তার বেশিরভাগটাই নারী কর্মী।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৭-২০২২— এই পাঁচ বছরের মধ্যে ভারতীয় কর্মক্ষেত্রে সামগ্রিক শ্রম অংশগ্রহণের হার ৪৬% থেকে নেমে এসেছে ৪০ শতাংশে। আইনি বয়সের নিরিখে ভারতে কর্মক্ষম শ্রেণীর মধ্যে রয়েছেন আনুমানিক ৯০ কোটি মানুষ। এই শ্রেণীভুক্ত মানুষদেরই চিহ্নিত করা হয় কোনো দেশের ‘শ্রমশক্তি’ হিসাবে। তবে আশ্চর্যজনকভাবে ভারতের শ্রমশক্তির প্রায় অর্ধেকের বেশি মানুষই আর কাজ করতে চান না যোগ্য কর্মক্ষেত্রের অভাবে। মুম্বাই-ভিত্তিক সংস্থার রিপোর্টে উঠে আসছে, বিগত ৫ বছরে সংশ্লিষ্ট অভিযোগে কর্মশক্তি থেকে সরে এসেছেন প্রায় ২.১ কোটি মানুষ। যাঁদের একটা বড়ো অংশ মহিলাকর্মী। বর্তমানে কর্মক্ষেত্রে কাজ করছেন মাত্র ৯ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক ভারতীয় মহিলা।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে, তবে কি এই ঘটনার জন্য দায়ী লকডাউন এবং মহামারী? না, চাকরি-চাহিদার রেখাচিত্র হদিশ দিচ্ছে অন্য বাস্তবের। মহামারীর অন্তত ৩-৪ বছর আগে থেকেই ক্রমশ সংকীর্ণ হয়েছে চাকরির ক্ষেত্র। হতাশা বৃদ্ধি পেয়েছে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে। কমেছে শ্রম অংশগ্রহণের হার। যা ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। সাম্প্রতিক সমীক্ষা এই ঘটনার জন্য দায়ী করছে, সরকারের গাফিলতি এবং অদূরদর্শিতাকেই।
এই পরিসংখ্যানকে ‘আশঙ্কাজনক’ হিসাবেই চিহ্নিত করছেন অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা। স্পষ্টতই এই ঘটনার প্রভাব পড়তে চলেছে দেশের অর্থনীতিতে। তরুণ প্রজন্ম কর্মক্ষেত্র-বিমুখ হয়ে পড়লে সার্বিকভাবে প্রভাব পড়বে দেশের জিডিপি-তে। মধ্যবর্তী আয়ের ফাঁদে আটকে থাকে দেশের অর্থনীতি। সমাজেও প্রকট হবে অর্থনৈতিক বৈষম্য।
২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির কাছে ভারত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, ২০৩০ সালের মধ্যেই নতুন করে তৈরি করা হবে অকৃষি-ভিত্তিক ৯ কোটি কর্মীপদ। তবে বাস্তবে এই লক্ষমাত্রার ধারে-কাছেও পৌঁছাতে পারবে না ভারত। এমনটাই জানাচ্ছে সমীক্ষা। ফলে, দেশের আর্থিক বৃদ্ধির যেমন বাধাপ্রাপ্ত হবে, তেমনই বন্ধ হবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অনুদানও। এখন দেখার কর্মক্ষেত্রজনিত এই সংকট কীভাবে অতিক্রম করে ভারত…
Powered by Froala Editor