খরা, বন্যা কিংবা ঘূর্ণিঝড় - প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার দেশের অর্ধেক মানুষ

গত কয়েক বছরে বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভারতের নানা প্রান্ত। কোথাও বন্যা তো কোথাও ঘূর্ণিঝড়। অনেক সময় আবার আগাম সতর্কতাটুকুও পাওয়া যায়নি। প্রকৃতি যে ক্রমশ আরও অপরিচিত হয়ে উঠছে, এমনটা বারবার বলে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যেই কাউন্সিল অন এনার্জি, এনভারমেন্ট অ্যান্ড ওয়াটার থেকে প্রকাশিত রিপোর্ট নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করল। এই প্রথম এধরণের কোনো রিপোর্টে কাউন্সিল ধাপে ধাপে ব্যাখ্যা করেছে কীভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরিমাণ বেড়ে চলেছে। আর সেই তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে, দেশের ৭৫ শতাংশ অঞ্চল নানা ধরণের দুর্যোগের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। ক্রমশ পরিমাণটা আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

রিপোর্টে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘনঘটার পাশাপাশি তার চরিত্র বদলের ইঙ্গিতও দিয়েছে কাউন্সিল। দেখা যাচ্ছে যেসমস্ত অঞ্চল এতদিন খরার জন্য কুখ্যাত ছিল, সেখানেই হঠাৎ করে দেখা যাচ্ছে বন্যার প্রাদুর্ভাব। আবার বন্যা কবলিত অঞ্চল ক্রমশ শুকিয়ে যাচ্ছে। ফলে বদলে যাওয়া প্রকৃতির সঙ্গে মানুষ সহজে মানিয়ে নিতেও পারছেন না। আর এর ফলে দেশের অন্তত ৫০ শতাংশ মানুষ বিপর্যস্ত হচ্ছেন প্রতি বছর। আবার বন্যার দোসর হয়ে আসছে ভূমিধস। বাড়ছে বঙ্গোপসাগর এবং ভারত মহাসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপও।

রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, ১৯৭০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৩৫ বছরে ভারতে ২৫০টি বড়ো ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটেছে। অন্যদিকে ২০০৫ সাল থেকে গত ১৫ বছরের মধ্যে সেই সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে ৩১০। পাশাপাশি, ২০০৫ সাল পর্যন্ত গড়ে প্রতিবছর ৫টি করে বড়ো ধরণের দুর্যোগ দেখা যেত। সেই সংখ্যাটা এখন পৌঁছেছে বার্ষিক ১১টি-তে। ২০১৯ সালে সমস্ত রেকর্ড ভেঙে ১৬টি প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটে গিয়েছে সারা দেশে। ২০২০ সালেও আসাম এবং মহারাষ্ট্র-রাজস্থানের বন্যার পাশাপাশি আমফানের মতো ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়েছে। এখনও অবধি সারা পৃথিবীতে অন্যতম বড়ো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের একটি আমফান। জলবায়ু যেভাবে বদলাচ্ছে তাতে পরিস্থিতি আগামীদিনে আরও সঙ্কটজনক হয়ে উঠতে চলেছে, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু এর থেকে মুক্তির উপায় কী, জানেন না কেউই।

Powered by Froala Editor