ভারতের কোণায় কোণায় লুকিয়ে রয়েছে অজস্র ইতিহাস, ঐতিহ্যের ছাপ। লুকিয়ে রয়েছে হাজার হাজার প্রাচীন গল্পগাথা, স্থাপত্য, ভাস্কর্য। আর তার দৌলতেই এবার আরও দুই আন্তর্জাতিক সম্মাননা যুক্ত হল ভারতের মুকুটে। মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়র এবং ওরছা শহরকে বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী শহরের তালিকাভুক্ত করল জাতিসঙ্ঘের সংস্থা ইউনেস্কো। ইউনেস্কোর আর্বান ল্যান্ডস্কেপ সিটি প্রোগ্রাম কর্মসূচির আওতায় এই দুই শহরের মাথায় চড়ল মর্যাদাপূর্ণ এই শিরোপা।
জাতিসংঘের সংস্থা ইউনেস্কো মূলত শিক্ষা, বিজ্ঞান এবং সংস্কৃতির আন্তর্জাতিক সংরক্ষণের বিভিন্ন কাজ করে আসছে দীর্ঘদিন ধরেই। আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে বিশ্বে শান্তি এবং সুরক্ষার প্রচার করাই মূল লক্ষ্য ইউনেস্কোর। ইউনেস্কোর এই স্বীকৃতির দরুন বৈশ্বিক পর্যটন মানচিত্র মধ্যপ্রদেশের এই দুই ঐতিহাসিক শহরের গুরুত্ব যে এক ধাক্কায় অনেকটাই বেড়ে গেল, তাতে সন্দেহ নেই কোনো।
মধ্যপ্রদেশে নবম শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল গোয়ালিয়র শহর। গুর্জার প্রতিহার, তোমার, বাঘেল কাচবাহো, সিন্ধিয়া— বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজবংশের দ্বারা চালিত হয়েছে গোয়ালিয়র। মিশেছে একাধিক সংস্কৃতি। আর ইতিহাসের সেসব স্মৃতিচিহ্নই ছড়িয়ে রয়েছে শহরের প্রসাদ, স্মৃতিস্তম্ভ, দুর্গগুলিতে। রয়েছে বহু ঐতিহ্যবাহী মন্দির। যার মধ্যে পাথর খোদাই করে বানানো সাস বহু কা মন্দির অন্যতম বিরল এক স্থাপত্য। রয়েছে উল্লেখযোগ্য গোয়ালিয়র দুর্গও। বালি পাথরের মালভূমির মাথায় অবস্থিত যে দুর্গ থেকে পর্যবেক্ষণ করা যায় গোটা গোয়ালিয়র শহরকে। দুর্গে পৌঁছানোর রাস্তাতেও ছড়িয়ে রয়েছে অজস্র নিদর্শন। রাস্তার দু’ধারে সাজানো রয়েছে অসংখ্য পবিত্র জৈন মূর্তি। পঞ্চাদশ শতকে নির্মিত এই দুর্গের গুর্জরি মহলকে বর্তমানে করে তোলা হয়েছে প্রত্নতাত্ত্বিক সংগ্রহের একটি জাদুঘর।
অন্যদিকে মন্দির এবং প্রাসাদে মোড়া ওরছা শহর ষোড়শ শতাব্দীতে বুন্দেলা রাজ্যের রাজধানী ছিল। এই শহরেই রয়েছে রাজ মহল, জাহাঙ্গীর মহল, রামরাজ মন্দির, রাই প্রবীণ মহল এবং ঐতিহাসিক লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দির। তবে মানসিংহ প্রসাদ, গুর্জরি মহল, সহাস্ত্রবাহু মন্দির— ইত্যাদি নির্মাণগুলির স্বাস্থ্য দিনে-দিনে খারাপের দিকে এগোচ্ছিল রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে। হেরিটেজ সিটির আওয়াভুক্ত হওয়ার পর প্রাণ ফিরতে চলেছে তাদের। ইউনেস্কো থেকে ইতিমধ্যেই জানানো হয়েছে খুব শীঘ্রই শুরু হবে এই স্থাপত্যগুলির স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও রাসায়নিক চিকিৎসা। খোদাই করা শিল্পগুলি যেন আরও ভালোভাবে দৃশ্যমান হয় এবং তার যেন উপযুক্ত সংরক্ষণ করা হয়, সেদিকেই নজর দিচ্ছে ইউনেস্কো।
Powered by Froala Editor