রাস্তাঘাটে অপরিচিত মানুষের সঙ্গে আলাপ জমে উঠতে দেরি হয় না অনেকেরই। বিশেষ করে সেই আলাপের জায়গা যদি হয় মদ কিংবা নেশার ঠেক। শুরুটা হয় এভাবেই। আর তারপর? তারপর ধরা যাক অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির লাশ পড়ে আছে রাস্তার ধারে। মাথাটা শরীর থেকে একেবারে আলাদা হয়ে গিয়েছে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে চারিদিক। কী ভাবছেন? কোনো পাল্প ফিকশনের গল্প? একেবারেই তা নয়। এই ভারতের বুকেই বিগত বেশ কিছু বছর ধরে ক্রমাগত ঘটে চলেছে এমন ঘটনা। কখনো দিল্লি তো কখনো পাটনা। শেষ পর্যন্ত সেই অজ্ঞাত আওতায়ীর সন্ধান পাওয়া গেল। কিন্তু তার থেকেও যা আশ্চর্যের, তা হল ১০টির বেশি খুন করেও নির্লিপ্ত আততায়ী। ‘ভালো লাগে তাই খুন করি’, অকপট স্বীকারক্তি তার।
সকাল থেকে আর বাকি পাঁচজন শ্রমিকের মতোই নির্মাণ প্রকল্পে কাজ করেন মহম্মদ রাজি। তখন তাঁকে আলাদা করে কিছুই বোঝা যায় না। সন্ধ্যে হলেই বন্ধুদের সঙ্গে চলে যান মদের ঠেকে। আর সেখান থেকেই জন্ম নেয় এক বিকৃত হিংসা। অপরিচিত মানুষ দেখলেই প্রথমে তার সঙ্গে আলাপ জমানো। তারপর কোনো নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়ে তাকে হত্যা করা। শুধু হত্যা করেই ক্ষান্ত হন না রাজি। এরপর নৃশংসতার সাক্ষ রাখতে মাথাটা পুরোপুরি কেটে ফেলেন। প্রথম প্রথম শুধু খুন করে ছেড়ে দিলেও পরে মৃতের কাছ থেকে যাবতীয় অর্থ কেড়ে নিতে শুরু করেন তিনি। প্রথমে দিল্লিতে একের পর এক হত্যালীলার পর রাজি আশ্রয় নেন বিহারে। সেখানেও পুলিশ তৎপর হয়ে উঠলে চলে আসেন হরিয়ানার গুরুগ্রামে। গুরুগ্রামে ২৩, ২৪ ও ২৫ নভেম্বর তিনদিন রাত্রেই খুন করেন রাজি। অতঃপর ধরাও পড়েন সেখানেই।
পুলিশের খাতায় ইতিমধ্যে ব্যতিক্রমী মামলা হিসাবে উঠে এসেছে ‘সাইকো রাজি’-র নাম। তার এরকম কাজের পিছনে মানসিক বিকৃতির প্রভাব স্পষ্ট। আর সেটা সম্ভবত লুকিয়ে আছে রাজির ছেলেবেলাতেই। তার নিজের কথায়, ছোটো থেকেই শুনতে হত সে কিছু পারে না। তাই সে দেখিয়ে দিতে চেয়েছে সে কী পারে। সত্যিই এতগুলো নিরপরাধ মানুষকে ঠান্ডা মাথায় খুন করা সহজ কাজ নয়। কিন্তু এই কৃতিত্ব পেয়েই কি খুশি মহম্মদ রাজি? নাকি স্নায়বিক দুর্বলতা ঘুচে গেলে আফশোস হবে তাঁরও? কী জানি!
Powered by Froala Editor