পিরামিড বলতেই সর্বপ্রথম মনে পড়ে মিশরের কথা। ঐতিহাসিকদের মতে খ্রিস্টের জন্মেরও প্রায় ২৭০০ বছর আগে মিশরে তৈরি হয়েছিল বিখ্যাত গিজা পিরামিড (Giza Pyaramid)। এর কাছাকাছি সময়েই স্থাপিত হয় জোসেরের পিরামিড। কিন্তু সম্প্রতি প্রত্নতত্ত্ববিদদের চোখে পড়েছে এমন এক আশ্চর্য নিদর্শন, যা পিরামিডের ইতিহাসের সময়কালের ধারণা বদলে দিতে পারে। মিশরে নয়, পৃথিবীর সবচেয়ে ‘প্রাচীন’ পিরামিডটির খোঁজ মিলেছে ইন্দোনেশিয়ায় (Indonesia)।
সে দেশের পশ্চিম প্রান্তের ঘন সবুজে ঢাকা পার্বত্য অঞ্চলে ছড়িয়ে রয়েছে বহু রহস্য। জীববৈচিত্র্যে অত্যন্ত সমৃদ্ধ এই অঞ্চলে মূলত প্রাচীন জনজাতিদের বসবাস। মৃত আগ্নেয়গিরির লাভাবিস্তৃত মাটিতে ছড়িয়ে থাকা পাথরদের পবিত্র বলেই এতদিন মনে করে এসেছে সেখানকার বাসিন্দারা। কিন্তু সেই সবুজে ঢাকা পাহাড়ি মাটির নিচেই এতদিন চাপা পড়েছিল পিরামিডের ঐতিহাসিক নিদর্শন। স্থানীয়রা একে বলে ‘পান্ডেন বেরুনডাক’। যার অর্থ ধাপে ধাপে ওঠা স্থাপত্য। যদিও ‘আর্কিওলজিক্যাল প্রসপেকশন’-এর গবেষণাপত্রে এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘গুনুং পাডাং’ (Gunung Padang)। অর্থাৎ ‘জ্ঞানের পাহাড়’। প্রত্নতত্ত্ববিদদের মতে, খ্রিস্টের জন্মের প্রায় ১৬ হাজার আগে ২৭ হাজার বছর আগে পাহাড়ের চূড়ায় নির্মিত হয় এটি। মিশরের পিরামিড তো বটেই, স্টোনহেঞ্জ ও গোবেকলি তোপের থেকেও পুরনো এর অস্তিত্ব। সেই অর্থে ‘গুনুং পাডাং’ মানবজাতি নির্মিত পৃথিবীর প্রাচীনতম মেগালিথিক স্থাপত্য।
অবশ্য খোঁজ মিলেছিল বছর দশেক আগেই। ইন্দোনেশিয়ার ‘ন্যাশনাল বিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন এজেন্সি’-র পক্ষ থেকে একটি বিশেষজ্ঞ দল ২০১৫ সাল পর্যন্ত নিয়মিত পরীক্ষানিরীক্ষা চালায় এর প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন নিয়ে। রেডিও-কার্বন ডেটিং ও অন্যান্য গবেষণায় জানা যায়, তুষার যুগের শেষ প্রান্তে তৈরি হয় এই পিরামিড। তারপরে দীর্ঘদিন অকেজো হয়ে ছিল ‘গুনুং পাডাং’। এরপর খ্রিস্টপূর্ব ৮০০০ সাল নাগাদ ফের শুরু হয় সংস্কারের কাজ। যা শেষ হয় খ্রিস্টপূর্ব ৬০০০ সালে। আর শেষবার পিরামিডটি সংস্কার হয় খ্রিস্টপূর্ব ১১০০ সালে।
বিশেষজ্ঞ দলের নেতৃত্বে থাকা ড্যানি নাতাউইদজাজার মতে, পিরামিডের পরিকল্পনার অত্যন্ত জটিল ধরনের। যার সবচেয়ে গভীর অংশটি মাটির প্রায় ৩০ ফুট নিচে। এছাড়াও এর ভিতরে রয়েছে বিরাট আকৃতির বেশ কয়েকটি গুপ্ত কক্ষ। যার সবকটি কক্ষের রহস্য এখনও সমাধান করা সম্ভব হয়নি। একই সঙ্গে মধ্যবর্তী সময়ে এখানকার প্রাচীন মানুষদের মধ্যে কোনো পরিবর্তন এসেছিল কিনা, সেটাও খতিয়ে দেখছেন তারা। অবশ্য সংশ্লিষ্ট গবেষকদের মতে, ইতিহাসের বিভিন্ন পথে বহু জনগোষ্ঠীর অধীনে এসেছে ‘গুনুং পাডাং’। সেই অনুযায়ী বদল এসেছে স্থাপত্য ও নিয়মে। পাহাড়ের ধাপ কেটে তৈরি এই মন্দিরের ব্যবস্থাপনা চমকে দিয়েছে বিজ্ঞানীদেরও।
আরও পড়ুন
পাঁচশো কবরের সন্ধান মিলল গুজরাটে, কোন প্রাচীন সভ্যতার ইঙ্গিত?
তাদের বিশ্বাস, আরও আশ্চর্যজনক তথ্য অপেক্ষা করে আছে এই পিরামিডের অভ্যন্তরে। ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে ক্যামেরা বসানোর কাজ। তবে, যে তথ্যই আবিষ্কৃত হোক না কেন, তা ইতিহাসকে নতুন চোখে দেখার দৃষ্টি খুলে দেবে, এমনটাই বক্তব্য তাদের। এখন দেখার কোন রহস্যের খাসমহল নিয়ে অপেক্ষা করে আছে ‘গুনুং পাডাং’? আর কবেই-বা সমাধান হয় সেই রহস্যের?
আরও পড়ুন
গোবেকলি তেপে : পৃথিবীর প্রাচীনতম ‘মন্দির’?
Powered by Froala Editor