তাঁকে নিয়ে রহস্যের শেষ নেই। অনেকেরই বিশ্বাস, তিনিই নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। এই দাবির সমর্থনে বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণও হাজির করেছিলেন অনেকে। অথচ সবই খারিজ করে দিল একটি রিপোর্ট। জাস্টিস সহায় কমিশনের রায়ে স্বভাবতই হতবাক অনেক নেতাজি-গবেষক। কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়েছে, গুমনামী বাবা ওরফে ভগবানজি নেতাজি নন, বরং নেতাজির অনুসারী ছিলেন।
গত বৃহস্পতিবার উত্তরপ্রদেশের অ্যাসেম্বলিতে প্রকাশ্যে আনা হয় এই রিপোর্ট। ১৩০ পাতার রিপোর্টে জাস্টিস বিষ্ণু সহায় জানিয়েছেন, ফৈজাবাদের রামভবন(যেখানে গুমনামী বাবা থাকতেন) থেকে যেসব জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়েছে, তার বিচার করে কিছুতেই এই সিদ্ধান্তে আসা যায় না যে, গুমনামী বাবাই নেতাজি। এর সপক্ষে ১১টি পয়েন্ট দাখিল করেছে কমিশন।
আরও পড়ুন
নেতাজির মতো, গুমনামী বাবার মৃত্যুর সঙ্গেও জড়িয়ে আছে রহস্য
কমিশনের মতে, গুমনামী বাবা বাঙালি ছিলেন এবং বাংলা-ইংরাজি-হিন্দি – তিনটি ভাষাতেই দক্ষতা ছিল তাঁর। পাশাপাশি, যুদ্ধ এবং সমসাময়িক রাজনীতির ব্যাপারেও পাণ্ডিত্য ছিল যথেষ্ট। এবং, অত্যন্ত অনুশাসন ও মানসিক জোর ছিল তাঁর, যে-কারণে পর্দার আড়ালে কাটাতে পেরেছিলেন এতগুলো বছর। গুমনামী বাবা সঙ্গীত ও সিগারের প্রতি অনুরক্ত ছিলেন এবং তাঁর গলার আওয়াজও ছিল নেতাজির মতো। তবে এসব কিছুই প্রমাণ করে না যে গুমনামী বাবাই নেতাজি, মত কমিশনের। গুমনামী বাবা নেতাজি না হলেও, তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় মাত্র ১৩ জনের উপস্থিতি দুর্ভাগ্যজনক – এও লেখা হয়েছে রিপোর্টটির শেষে।
এর আগেকার রিপোর্টগুলিতে উঁকি দিলে দেখা যায়, শাহানওয়াজ কমিশন ও খোসলা কমিটি বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যুর তত্ত্বকেই সমর্থন জানিয়েছিল। গত শতকে মুখার্জি কমিশন রায় দেয়, বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু হয়নি। কিন্তু গুমনামী বাবাই নেতাজি কিনা, এ-নিয়ে কোনো স্পষ্ট অভিমত জানাননি জাস্টিস মুখার্জি। এরপর, এলাহাবাদ হাইকোর্ট গুমনামী বাবাকে নিয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দেয় ২০১৩ সালে। সেই অনুযায়ী, ২০১৬ সালে তৈরি হয় জাস্টিস সহায় কমিশন। তারই রিপোর্ট প্রকাশ্যে এল সম্প্রতি।
আরও পড়ুন
‘মৃত’ নেতাজির যে ছবিগুলি দেখে চমকে উঠেছিল বাঙালি
কমিশনের রায় কি নিখুঁত? এই প্রশ্ন কিন্তু উঠে আসবেই। এর আগেও একাধিক কমিশন নেতাজি-সংক্রান্ত বিভিন্ন রায় দিয়েছে, যা পরবর্তীকালে খারিজ হয়ে গেছে। তখন কেন্দ্রে ছিল কংগ্রেস সরকার। বর্তমান সরকারের আমলেও গুমনামী বাবাই নেতাজি – এই তত্ত্ব খারিজ হয়ে যাওয়ার পিছনে কোনো সরকারি চাপ নেই তো? বিভিন্ন সময় চন্দ্রচূড় ঘোষ, অনুজ ধর প্রমুখ নেতাজি গবেষকরা একাধিক উদাহরণ তুলে এনেছেন গুমনামী বাবার সম্পর্কে। এমনকি, গুমনামী বাবার হাতের লেখার সঙ্গে মিলে গেছে নেতাজির হাতের লেখাও। এছাড়াও, তাঁর ঘর থেকে প্রাপ্ত একাধিক জিনিস কিন্তু নেতাজির দিকেই ইঙ্গিত করে। সেখানে সহায় কমিশনের এই বক্তব্য – ‘গুমনামী বাবা নেতাজি নন, বরং তাঁর অনুসারী ছিলেন’ কতটা যুক্তিযুক্ত, তা ভেবে দেখতেই হয়। বিভিন্ন জিনিস ও প্রমাণ যেখানে নেতাজির অস্তিত্বের দিকেই ইঙ্গিত করছে, কমিশনের এই রিপোর্ট কি অতিরিক্ত সরলীকরণ হয়ে গেল না?