গুজরাটে ২০০২ এর গোধরা কাণ্ড-পরবর্তী গণহত্যা আজও ভুলতে পারেনি ভারত। কয়েকহাজার হিন্দু-মুসলিম মানুষের মৃত্যু যেন গোটা গুজরাটকে শ্মশানে পরিণত করেছিল।
সে-সময় দুই যুবকের ছবি ভাইরাল হয়েছিল তৎকালীন মিডিয়ায়। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং না থাকায় আজকের মত এত দ্রুত বহু খবরই পৌঁছোত না সাধারণ মানুষের কাছে। কিন্তু এই দুই যুবকের ছবিদুটি চিহ্নিত করেছিল সে-সময়ের ভয়ংকর অবস্থাকে।
ছবিতে দেখা যায়, এক হিন্দু যুবক মাথায় গেরুয়া ফেট্টি বেঁধে তরোয়াল হাতে হুংকার দিচ্ছেন, আর এক মুসলিম যুবক চোখে জল নিয়ে প্রাণভিক্ষা চাইছেন। হিন্দু যুবকটি অশোক পারমার। তখন তিনি ছিলেন আমেদাবাদের ফুটপাথের এক সাধারণ মুচি। আর অপরজন কুতুবউদ্দিন আনসারি। পেশায় দর্জি।
বহুদিন পর এঁরা আবার মিলে গিয়েছিলেন বন্ধুত্বে। অবিশ্বাস্য হলেও, ২০১২ সাল থেকেই এঁদের বন্ধুত্বের শুরুয়াত কেরলের সিপিআইএমের এক অনুষ্ঠানে।
দাঙ্গার ভয়াবহতা অশোকের মনে সে-সময় গভীর দাগ কেটেছিল। পুলিশ ও কোর্টের হাজিরার সময় থেকেই আস্তে আস্তে পালটে যেতে থাকেন অশোক। আর তার প্রতিফলন ঘটে কুতুবউদ্দিনের সঙ্গে এই বন্ধুত্বে।
সম্প্রতি কেরল সিপিআইএমের আর্থিক সহায়তায় একটি জুতোর দোকান খোলেন অশোক। সেই দোকানের ফিতে কাটতে আমন্ত্রণ করেছিলেন তাঁর পরম সুহৃদ কুতুবউদ্দিনকে। অশোক তাঁর এই দোকানটির নাম দিয়েছেন, 'একতা চপ্পল শপ'। দস্যু রত্নাকরের বাল্মীকি হয়ে ওঠার চেয়ে এ-ঘটনা কিছু কম চমকপ্রদ নয়। আজও এই ঘটনা আগামী দিনে সুস্থ সমাজ গড়ে ওঠার বিশ্বাস জোগায়। পৃথিবীতে অশোক-কুতুবউদ্দিনের মত বন্ধুরাই আগামী দিনে আশার আলো দেখাবেন।