নতুন বছরেই পরিবেশকর্মীদের জন্য সুখবর। ভারত, তথা পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবনের পাখি-বৈচিত্র্যের রিপোর্ট প্রকাশ করল জুওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া। আর সেই রিপোর্ট উল্লেখ করা হয়েছে, সব মিলিয়ে বর্তমানে মোট ৪২৮টি পাখি প্রজাতির আবাস পশ্চিমবঙ্গের এই ব-দ্বীপ অঞ্চল। শুধু তাই নয়, বৃদ্ধি পেয়েছে পাখির সংখ্যাও।
লেখক এবং জুওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার কর্মকর্তা কৈলাশ চন্দ এবং আরও দুই পক্ষী বিশারদ গোপীনাথ মহেশ্বরম ও অমিতাভ মজুমদারের লেখা একটি বইও প্রকাশিত হয় শুধুমাত্র সুন্দরবনের পাখিদের সম্পর্কে। ‘বার্ডস অফ দ্য সুন্দরবন বায়োস্ফিয়ার’ নামের সেই বইটিতে এই অঞ্চলে প্রাপ্ত প্রতিটি পাখি প্রজাতির ছবি-সহ বিশদ বর্ণনা নথিভুক্ত হয়েছে। রয়েছে পুরুষ এবং স্ত্রী পাখি চিহ্নিতকরণের পদ্ধতিও। অঞ্চলের সাধারণ মানুষ এবং তরুণ প্রজন্মকে পরিবেশমুখী করে তুলতেই এই উদ্যোগ জুওলজিক্যাল সার্ভের।
বইটিতে উল্লেখিত হয়েছে, ৪২০০ বর্গ কিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে সুন্দরবনে পরিযায়ী ও স্থানীয় পাখি মিলিয়ে রয়েছে ৪২৮টি প্রজাতি। দেশে প্রাপ্ত ১২টি প্রজাতির মাছরাঙার ৯টিরই দেখা মেলে এই অঞ্চলে। সেইসঙ্গে গোলিয়াথ হেরোন, স্পুনবিল স্যান্টপিপার, হুইমবেল, লার্জ ইগ্রেট, টেরেক স্যান্ডপিপার, প্যাসিফিক গোল্ডেন প্রোভারের মতো বিরল প্রজাতিও লক্ষ করা যাচ্ছে এই অঞ্চলে। যা ইতিবাচক দিক হিসাবেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ভারতে বর্তমানে ১৩০০ প্রজাতির পাখির দেখা মেলে। যার প্রায় এক তৃতীয়াংশই বাসিন্দা সুন্দরবনের। বৈচিত্র্যের নিরিখে গোটা ভারতের মধ্যে যা রয়েছে শীর্ষস্থানে।
বিজ্ঞানী ও প্রকৃতিপ্রেমী ‘ভারতের বার্ডম্যান’ সালিম আলির ১২৫ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বই প্রকাশের এই অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন জুওলজিক্যাল সার্ভের কর্মকর্তারা। পাখি সম্পর্কে স্থানীয় মানুষকে সচেতন করতে পারলে তাঁদের জীবিকারও রাস্তা খুলে যাবে, এমনটাই ধারণা কর্মকর্তাদের।
গত বছরের থেকেও চলতি বছরে পাখির সংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ লকডাউন। দূষণ হ্রাস একপ্রকার শাপে বর হয়ে দাঁড়িয়েছে সুন্দরবনের কাছে। বার্ড ওয়াচার সোসাইটি নামের একটি অলাভজনক সংস্থার সম্পাদক সুজন চট্টোপাধ্যায় জানালেন, “সুন্দরবন মূলত মৎস্যজীবিকা নির্ভর, পাখি শিকার এই অঞ্চলে সেইভাবে হয় না। কাজেই সুন্দরবনের কোর অঞ্চলে পাখির সংখ্যা অপরিবর্তিত আছে। তবে সুন্দরবন ম্যানগ্রোভ অরণ্য হওয়ার খুব বেশি প্রজাতির পাখি দেখা যায় না। এই রিপোর্টে যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে, তা আসলে সামগ্রিক সুন্দরবন অঞ্চলের। অর্থাৎ অভয়ারণ্য এবং পার্শ্ববর্তী জনবসতি অঞ্চল মিলিয়ে। হিউম্যান হ্যাবিটেশন রয়েছে যেসব অঞ্চলে সেখানে বিভিন্ন পাখি প্রজাতি আসে। ধানক্ষেত, বাগান, জলাশয়, জলাভূমি— এইসব জায়গায় দেখতে পাওয়া যায় এই প্রজাতিগুলিকে।”
বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে রাজ্যজুড়ে চলছে পাখি গণনার কাজ। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসেই আসতে চলেছে সেই রিপোর্ট। গণনার কাজে যুক্ত বেসরকারি সংস্থা হিল (এইচইএএল)-এর সম্পাদক শুভ্রকান্তি চট্টোপাধ্যায়ের কথায় ধরা দিল খানিকটা উদ্বেগই। এখনও পর্যন্ত সম্পূর্ণ পরিস্থিতি বলা না গেলেও শুভ্রবাবু জানালেন, “অনেকক্ষেত্রেই কমেছে পাখির আবাসস্থল। আর্কটিক অঞ্চলের পাখিদের সংখ্যা কমেছে আশঙ্কাজনকভাবে। জলবায়ু পরিবর্তনের চাপ পড়েছে এদের পপুলেশনে।”
আরও পড়ুন
বিরল ওয়াটার ফেজেন্ট থেকে কাছিম, হিন্দমোটরের জলায় চলছে নির্বিচার শিকারযজ্ঞ
Powered by Froala Editor