অস্বাভাবিক হারে গলছে গ্রিনল্যান্ডের বরফের চাদর, চলতি শতকের শেষে জলস্তর বাড়বে ১ মিটার

প্রতিনিয়তই নিঃশব্দে এক দানবের পেটে তলিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী। আর সেই দানবের নাম বিশ্ব-উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং। পৃথিবীর ক্রমাগত উষ্ণতা বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য এবং আবহাওয়া বদলের জন্য গ্রিনল্যান্ডের বরফের স্তর ভয়ঙ্কর দ্রুততায় হ্রাস পাচ্ছে। এবার সেই তথ্যই ফুটে উঠল সাম্প্রতিক গবেষণায়। এই গবেষণা জানাল, বরফের পরিমাণের এই অভাবনীয় হ্রাস পূরণ হবে না কোনোদিনই।

যুক্তরাষ্ট্রের ওহায়ো স্টেট ইউনিভার্সিটির একদল বিজ্ঞানীর সাম্প্রতিক গবেষণা এমনই আশঙ্কার কথা শোনাল। এই গবেষণার সহ-গবেষক প্রফেসর ইয়ার হাওয়াট জানান, গ্রিনল্যান্ডের বরফের চাদর ক্রমশ সংকুচিত হয়েই চলেছে। গত ২০-৩০ বছরের আগের আবহাওয়ার অবস্থাতেও যদি আমরা ফিরে যাই তাহলেও আটকানো যাবে না এই ক্ষয়।

গবেষণাটি মূলত গত চার দশকের স্যাটালাইট ইমেজিং এবং তথ্যে ওপর ভিত্তি করেই করেছেন বিজ্ঞানীরা। আর সেখানেই দেখা গেছে, ২০০০ সাল থেকে অস্বাভাবিকভাবেই প্রতিবছর বৃদ্ধি পেয়েছে এই বরফ গলে যাওয়ার পরিমাণ। আর এই গলে যাওয়া বরফের পরিমাণ, প্রতিবছরের তুষারপাতের থেকে কয়েকগুণ বেশি। আবহাওয়ার পরিবর্তন এখন পুরোপুরি উলটে দিলেও, সমুদ্রের উষ্ণস্রোতের কাছে ধ্বংস হবে এই বরফের স্তূপ। পাশাপাশিই গ্রিনল্যান্ডের বেশিরভাগ হিমবাহও সমুদ্রের সংস্পর্শে চলে এসেছে।

প্রতিবছর শুধুমাত্র গ্রিনল্যান্ড থেকেই ২৮ হাজার কোটি টন বরফ গলে জল হচ্ছে। যা পৃথিবীর মধ্যে সমস্ত বরফগলনের হারের মধ্যে সর্বোচ্চ। এমনটাই জানাচ্ছেন গবেষণার প্রধান গবেষক ম্যাকলিয়া কিং। শুধুমাত্র গ্রিনল্যান্ডের কারণেই পৃথিবীর সমুদ্রতল বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতি বছরে ১ মিলিমিটারেরও বেশি। আর এভাবেই সমুদ্রতলের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে এই শতকের শেষে গিয়ে তা দাঁড়াবে ৩ ফুট বা ১ মিটারের কাছাকাছি। জলের তলায় তলিয়ে যাবে সারা বিশ্বের যাবতীয় সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চল। পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে দ্বীপরাষ্ট্রগুলির জন্য। সাইক্লোন বা সুনামির মত ঘটনায় জলোচ্ছ্বাস ভাবনাতীত মাত্রা নেবে। ফলে অনেক দ্বীপই আর বসবাসযোগ্য থাকবে না বলেই আশঙ্কাপ্রকাশ করছেন বিজ্ঞানীরা।

আরও পড়ুন
সমস্ত মারণ ভাইরাসের চেয়েও বেশি মৃত্যু হতে পারে বিশ্ব উষ্ণায়নেই

পাশাপাশিই তাঁরা জানাচ্ছেন, গ্রিনল্যান্ডে আকস্মিক বরফগলনের ঘটনাও ঘটতে দেখা গেছে অদূর অতীতে। এক মুহূর্তেই হঠাৎ ভেঙে পড়েছে বড়ো পরিমাণ বরফের চাঁই। ভবিষ্যতে এই ঘটনার আপতন বিপদ বাড়াতে পারে আকস্মিকই। আগে প্রস্তুত না থাকলে বিপদে পড়তে হবে তীরবর্তী বাসিন্দাদের। 

আরও পড়ুন
বাকি পৃথিবীর থেকে তিনগুণ দ্রুত বাড়ছে দক্ষিণ মেরুর উষ্ণতা, জানাল গবেষণা

তবে এই ঘটনাই খারাপতম নয়। পরিবেশের মাণ যেভাবে হ্রাস পাচ্ছে তাতে ক্রমশ বৃদ্ধি পাবে এই বরফগলনের হার। এই ভবিতব্য থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। তবে দূষণ কমিয়ে আনতে পারলে প্রকৃতির থেকে বসবাসের জন্য আরও খানিকটা সময় কিনে আনা সম্ভব হবে বলেই জানাচ্ছে এই গবেষণা। কিন্তু এত গবেষণা, সমীক্ষা কেবল খাতায় কলমেই থেকে যাবে নাকি সভ্যতা সচেতন হবে এই সতর্কতায়? সেই প্রশ্নই থেকে যাচ্ছে দোলাচলে...

আরও পড়ুন
চাদর দিয়ে ঢেকে দেওয়া হচ্ছে হিমবাহ, উষ্ণায়ন থেকে বাঁচাতে উদ্যোগ ইতালির

Powered by Froala Editor