মাত্র ১ মাসের মধ্যে তৈরি হয়েছে ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ কাঁটাতার। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করে অবশেষে সাফল্যের কথা ঘোষণা করল গ্রিস সরকার। কিন্তু এই সাফল্যের সঙ্গে বিশ্বজুড়ে তৈরি হয়েছে সমালোচনার ঝড়। আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে ইউরোপের নানা দেশেই শরণার্থী শিবির তৈরি নিয়ে আলোচনা চলছে। ব্রিটিশ জনগণের একটা বড়ো অংশ ইতিমধ্যে আফগানদের আশ্রয় দেওয়ার পক্ষে মত রেখেছেন। সেখানে দাঁড়িয়ে গ্রিসের এই সিদ্ধান্তে মানবিকতা নিয়েই প্রশ্ন তুলছে মানুষ।
ভৌগলিক কারণেই মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইউরোপ যেতে গেলে গ্রিস পেরিয়ে প্রবেশ করাই সবচেয়ে নিরাপদ। এই কারণে গ্রিসকে ইউরোপের শরণার্থীদের প্রবেশদ্বারও বলা হয়। সোভিয়েত পতনের পর থেকেই এই রাস্তা খুলে যায়। আর ২০০১ সালে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ শুরু হলে সেই সংখ্যাটা আরও বাড়তে থাকে। গ্রিসে আশ্রয় নেওয়া মানুষদের অনেকেই অবশ্য কিছুদিনের মধ্যে অন্য দেশে চলে গিয়েছেন। তবে বেশিরভাগই থেকে গিয়েছেন গ্রিসে। এথেন্স এবং শহরতলিতে গড়ে উঠেছে বিরাট কলোনি। আর এইসমস্ত কারণেই নতুন করে শরণার্থী প্রবেশ করলে গ্রিসের অর্থনীতির উপরে চাপ পড়বে। মূলত এই যুক্তিই দেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে। তবে পরিসংখ্যান দিয়ে এই বক্তব্য নাকোচ করছেন অর্থনীতিবিদদের একাংশ।
২০০১ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত গ্রিসে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীদের অধিকাংশই আইনি অনুপ্রবেশকারী। সংখ্যাটা সব মিলিয়ে সমগ্র গ্রিসের জনসংখ্যার প্রায় ৭ শতাংশ। তবে এই ৭ শতাংশ মানুষের উপরেই নির্ভর করে জিডিপির প্রায় ২৪ শতাংশ। ফলে একভাবে বলা যায় অনুপ্রবেশকারীরাই টিকিয়ে রেখেছেন গ্রিসের অর্থনীতিকে। তবে এই মুহূর্তে সেই সস্তা শ্রমিকের প্রয়োজনটাও নেই বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। আর সেই কারণেই এতদিন অনুপ্রবেশকারীদের বৈধ পরিচয়পত্র দেওয়া হলেও এইবার সীমান্ত বন্ধ করে দিল গ্রিস। কার্যত যখন প্রয়োজন ছিল তখন অনুমতি দেওয়া হয়েছে। গ্রিস সরকারের এই মনোভাবের সমালোচনা ওঠা তাই স্বাভাবিক।
অন্যদিকে গ্রিস সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে ইউরোপের অন্য দেশে পৌঁছানোও যথেষ্ট কঠিন হয়ে পড়ে। অবশ্য গ্রিস জানিয়েছে অন্য কোনো দেশ চাইলে গ্রিস বিশেষ শরণার্থীদের জন্য রাস্তা খুলে দিতে পারে। কিন্তু অনুপ্রবেশের নিয়ম অনুযায়ী মানুষ আগে সীমানা পেরিয়ে প্রবেশ করে। তারপর সেই দেশে অনুপ্রবেশকারী হিসাবে বৈধতা পায়। ফলে গ্রিস সীমান্ত অবরোধ করলে ইউরোপের বাকি দেশগুলোর পক্ষেও শরণার্থীদের জায়গা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। এই বিষয়ে তাই ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সম্মেলনও সরগরম হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন অনেকে। কিন্তু দেশ হারিয়ে যে মানুষগুলো শুধু ভেসে চলেছেন, তাঁরা মাথা গোঁজার জায়গা পাবেন কীভাবে?
আরও পড়ুন
শরীর অর্ধেক পুঁতে, ইট ছুঁড়ে হত্যা; ভয়াল স্মৃতি এলজিবিটি সম্প্রদায়ের আফগানদের
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
আফগান শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে রাজি, মানবিক সিদ্ধান্ত ব্রিটেনের