ইউক্রেনের গণকবর খুঁড়ে তুলছে স্তালিনের নৃশংসতার স্মৃতি

সময়টা ১৯৩৬ সাল। তখন গ্রেট পার্জের পথে হাঁটছে রাশিয়া। জোসেফ স্তালিনের হাত ধরে ক্রমশ শক্তি বৃদ্ধি করে চলেছে সোভিয়েত ইউনিয়ন। একইসঙ্গে সোভিয়েত জুড়ে বিক্ষিপ্তভাবেই ঝড় উঠছে স্তালিনের এই স্বৈরাচারী মনোভাবেরও। তবে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ শাসকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার জন্য মাশুল গুনতে হয়েছিল সমস্ত সমালোচক এবং প্রতিদ্বন্দ্বীদের। স্তালিনের নির্দেশে লক্ষ লক্ষ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করেছিল রাশিয়ার সিক্রেট পুলিশ, এনকেভিডি। তবে পরিকল্পিত সেই জেনোসাইডের কথা কোনোদিনই স্বীকার করেনি সোভিয়েত। এবার সেই অন্ধকার ইতিহাসেরই প্রমাণ মিলল ইউক্রেনে। ইউক্রেনের মাটিতে খুঁজে পাওয়া গেল গণকবর।

বছর খানেক আগেই শুরু হয়েছিল ইউক্রেনের ওডেসা বিমানবন্দরের সম্প্রসারণের কাজ। সম্প্রতি সেখানে খননকার্যের সময়ই সন্ধান মিলল এই গণকবরের। ঘটনাস্থলটি পরীক্ষা করার পরেই রীতিমতো বিস্মিত হয়ে যান প্রত্নতাত্ত্বিকরা। প্রত্নতাত্ত্ববিদ ও সাইটের প্রধান পরামর্শদাতা টাটিয়ানা সামোয়েলোভার অভিমত, সব মিলিয়ে প্রায় ২০ হাজার মৃতদেহ শায়িত রয়েছে ওডেসা বিমানবন্দর সংলগ্ন এই অঞ্চলটিতে। আর উদ্ধার হওয়া নরকঙ্কালের কার্বন ডেটিং-এর সঙ্গে হুবহু মিলে যাচ্ছে গ্রেট পার্জের সময়সীমা। ইউক্রেনের প্রত্নবিদরা জানাচ্ছেন, মোট পাঁচটি স্তরে সজ্জিত এই গণকবর। এখনও পর্যন্ত খননের মাধ্যমে কেবলমাত্র উপরের স্তরের নরকঙ্কালগুলিকেই সরিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে। পুরো সমাধিক্ষেত্রটির খননকার্য বেশ সময়সাপেক্ষ।

গ্রেট পার্জের সময় থেকে বিশ্বযুদ্ধের আগে পর্যন্ত পূর্ব ইউরোপে প্রায় সাড়ে সাত লক্ষ মানুষ শিকার হয়েছিলেন স্তালিনের নির্মম আগ্রাসনের। সেই নিষ্ঠুরতার রোষ এসে পড়েছিল ইউক্রেনেও। গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল প্রায় ৮৬০০ মানুষকে। পাশাপাশি স্তালিনের কৃষি সংস্কার আইনের জন্যও ইউক্রেনে দেখা দিয়েছিল চরমতম দুর্ভিক্ষ। খাবারের অভাবেও প্রাণ হারান বেশ কয়েক হাজার ইউক্রেনিয়ান। পরবর্তীতে সোভিয়েত ভেঙে ইউক্রেন স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করার পর সেই দুর্ভিক্ষকেও গণহত্যার আখ্যা দিয়েছিল ইউক্রেনিয়ান সরকার। কিন্তু সদ্য-আবিষ্কৃত নরকঙ্কালগুলির মৃত্যুর কারণ ঠিক কী— বিস্তারিত পরীক্ষা ছাড়া তা এখনই নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয় বলেই জানাচ্ছেন গবেষকরা।

তবে এই প্রথম নয়। ইউক্রেনের কিয়েভ শহরের বাইরে বাইকিভনিয়া গ্রামেও এর আগে খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল গণকবরের অস্তিত্ব। সেটা ছিল ৯০-এর দশক। তবে সেই গণহত্যার দায় স্বীকার করেনি রাশিয়া। সেই সময়কার বেশ কিছু নথি এখনও মস্কোতে সংরক্ষিত রয়েছে বলেই অভিমত ইউক্রেনের প্রত্নতাত্ত্বিকদের। কিন্তু দেশের ভাবমূর্তি রক্ষার স্বার্থে তা সামনে আনেনি রাশিয়া। ওডেসার ক্ষেত্রেও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে চলেছে বলেই অনুমান...

আরও পড়ুন
স্বাধীনতাকামী নামিবিয়ায় নির্মম গণহত্যা, শতাব্দী পেরিয়ে ক্ষমাপ্রার্থনা জার্মানির

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
নিজের সেনাবাহিনীর ওপরেই গুলিবর্ষণ, স্তালিনের নির্দেশে রেড-আর্মির ‘জেনোসাইড’

More From Author See More