আজও ইউনেস্কোর হেরিটেজ পর্যটনক্ষেত্রগুলির তালিকায় প্রথম সারিতে থেকে গিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার প্রবাল উপকূল। পোশাকি ভাষায় যার নাম গ্রেট বেরিয়ার রিফ (Great Barrier Reef)। কোভিড অতিমারীর আতঙ্ক মিটতে না মিটতেই পর্যটকদের ভিড়ও জমে গিয়েছে। কিন্তু আদৌ পর্যটনের উপযুক্ত অবস্থায় নেই গ্রেট বেরিয়ার রিফ। বলা ভালো, গত ৩০ বছরে পুরো উপকূলই ধুয়ে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। সম্প্রতি এমনটাই দাবি করা হয়েছে ‘সায়েন্স ডিরেক্ট’ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে। আর এর পিছনে বিশ্বব্যাপী উষ্ণায়নকেই দায়ী করছেন বিজ্ঞানীরা।
একদিকে ১০ দিনব্যাপী গ্লাসগো শহরে অনুষ্ঠিত হল কপ-২৬ সম্মেলন। পরিবেশ সুরক্ষার উদ্দেশ্য নিয়ে একাধিক চুক্তি সাক্ষরিত হল নানা দেশের মধ্যে। আর এর মধ্যেই পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ প্রভাবের কথা উঠে আসছে। তেমনই উঠে এল অস্ট্রেলিয়ার প্রবাল উপকূলের কথাও। সব মিলিয়ে প্রায় ২৩০০ কিলোমিটার বিস্তীর্ণ উপকূলটি সব মিলিয়ে ৩০ হাজারের মতো পৃথক সমুদ্রসৈকত নিয়ে তৈরি। কিন্তু সাম্প্রতিক স্যাটেলাইট প্রেরিত ছবিতে দেখা গিয়েছে, এই ৩০ হাজার সৈকতের মধ্যে মাত্র একটি সৈকতই সম্পূর্ণভাবে উষ্ণায়নের কবল থেকে মুক্ত। বাকি প্রতিটা সৈকতেই উষ্ণ সামুদ্রিক ঝড়ের স্পর্শ পড়েছে।
১৯৯৮ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বারবার উষ্ণ সমুদ্রস্রোতের কবলে পড়েছে প্রবাল উপকূল। এর মধ্যে ১৯৯৮, ২০০২, ২০১৬, ২০১৭ এবং ২০২০ সালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উষ্ণ সমুদ্রস্রোতের প্রকোপও বাড়ছে। আর এর ফলে প্রবাল উপকূলকে বাঁচানোর জন্য যে সমস্ত সংরক্ষণ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, সেগুলিও ব্যর্থ হচ্ছে বারবার। বিশ্ব উষ্ণায়ন কমাতে না পারলে প্রবাল উপকূলকে বাঁচানোর আর কোনো রাস্তা নেই, এমনটাই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু কপ-২৬ সম্মেলনে কি আদৌ এর সমাধান মিলবে? গবেষণাদলের প্রধান টেরি পি হিউগস অবশ্য এই বিষয়ে খুব একটা আশাবাদী নন। তাঁর মতে, কপ-২৬ সম্মেলনের চুক্তি সফল হলে উষ্ণায়নের একটি মাত্রা বেঁধে দেওয়া সম্ভব হবে কেবল। যে পরিকল্পনা প্যারিস চুক্তিতেও নেওয়া হয়েছিল। তাতে পরিবেশের কিছুটা স্বস্তি মিলবে অবশ্যই। কিন্তু যা হারিয়ে গিয়েছে, তাকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। তার জন্য আরও বড়ো পরিকল্পনার প্রয়োজন।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
অস্তিত্ব হারাচ্ছে প্রবাল, সংকটে গ্রেট বেরিয়ার রিফের বাস্তুতন্ত্র