সমাধিফলকে নিজের নাম! আদালতের দ্বারস্থ মহিলা

হাসপাতালের পাশে একটি সরকারি কবরস্থান। সারি সারি সমাধির উপর ক্রুশচিহ্ন আঁকা। তবে হঠাৎ যদি তার মধ্যেই নিজের নাম দেখেন? চমকে উঠবেন সন্দেহ নেই। ঠিক এমনই প্রতিক্রিয়া হয়েছিল ইতালির বাসিন্দা মার্তা লোই-এর। নিজের চোখেই নিজের সমাধি দেখলেন তিনি। কিন্তু কেন এই সমাধি? কাছে গিয়েই অবশ্য তার কারণ বুঝতে পারলেন মার্তা। নামের নিচে যে তারিখ খোদাই করা, সেদিনই গর্ভপাত হয়েছিল মার্তা লোই-এর। একটি সাক্ষাৎকারে মার্তা জানান, হঠাৎ রাগে হাসপাতাল ভেঙে ফেলতে ইচ্ছা হয়েছিল তাঁর। আর সবথেকে খারাপ লেগেছিল, তিনি নাস্তিক হওয়া সত্ত্বেও তাঁর নামাঙ্কিত সমাধির উপর রয়েছে ক্রুশচিহ্ন।

বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন মার্তা লোই। তবে ইতালির বর্তমান আইন অনুযায়ীই কাজ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেই আইনেই বদল চান মার্তা লোই। গর্ভপাত সংক্রান্ত আইনি জটিলতা শুরু হয়েছিল আজ থেকে ৬ দশক আগে। ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে বিশ্বযুদ্ধোত্তর ইউরোপেও নিষিদ্ধ ছিল গর্ভপাত। অথচ অনেক সময়েই দুর্বল বা অসুস্থ ভ্রূণ গর্ভের মধ্যেই নষ্ট হয়ে যেত। তখন মায়ের জীবন নিয়েও সংশয় দেখা দিত। শিশুকে তো বাঁচানো সম্ভব নয়, কিন্তু মায়ের জীবনটা রক্ষার চেষ্টা তো করা উচিৎ। ইতালির বহু চিকিৎসক তখন গর্ভপাত আইনসিদ্ধ করার দাবি জানান। আর এই দাবির সঙ্গেই মিশে যায় নারীবাদী আন্দোলনের স্রোতও।

অবশেষে গর্ভপাত আইনসিদ্ধ হলেও ইতালির আদালত জানিয়ে দেয় ১২ সপ্তাহের পর কোনো ভ্রূণ নষ্ট করা যাবে না। তবে এর পরবর্তী সময়েই তো বিপদের সম্ভাবনা বেশি হয়। তাহলে? আন্দোলন তাই থেমে থাকল না। ১৯৭৮ সালের আইন অনুযায়ী গর্ভপাতের অধিকার দেওয়া হল। আন্দোলন বন্ধ হল। কিন্তু ৪৩ বছরের এই আইন নিয়েই এবার তৈরি হচ্ছে বিতর্ক।

আইন অনুযায়ী কোনো ভ্রূণের বয়স ১২ সপ্তাহের বেশি হলে তা সমাধিস্থ করার দায়িত্ব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। আর সেই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হবে খ্রিস্টান মতেই। মার্তা লোই-এর ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। কিন্তু তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, গর্ভধারণ হোক বা গর্ভপাত, তা তো মহিলাদের একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। তাকে এভাবে জনসমক্ষে হাজির করা ব্যক্তিগত তথ্য অপহরণ ছাড়া আর কিছুই নয়। তাছাড়া সমাধিস্থ করতে হলে কেন শুধুই খ্রিস্টান রীতিতে হবে? এই আইন কি ইতালির ধর্মনিরপেক্ষতারও বিপরীত নয়?

আরও পড়ুন
মানুষের সমাধি ঘিরে বন্যপ্রাণীর মূর্তি, ক্ষমতা ‘নিয়ন্ত্রণে’র অদ্ভুত বিশ্বাস কলম্বিয়ার উপজাতিদের

ইতিমধ্যে মার্তা লোই-কে সমর্থন জানিয়েছেন অনেকেই। গণসাক্ষর অভিযান শুরু করেছে কয়েকটি নারীবাদী সংগঠন। শেষ পর্যন্ত কি আইনে পরিবর্তন আসবে? আপাতত সেই উত্তরের অপেক্ষাতেই সকলে।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
চাষের জমির নিচ থেকে উদ্ধার হাজার বছরের পুরনো সমাধিক্ষেত্র