বাড়ছে বেসরকারি ইংরাজি মাধ্যম, বন্ধের মুখে কলকাতার শতাধিক সরকারি স্কুল

একবিংশ শতকের পশ্চিমবঙ্গে ছেলে-মেয়েদের হতে হবে আধুনিক, স্মার্ট। হতে হবে ইংরাজিতে সেরা। অন্যদিকে ধুঁকছে খাস কলকাতারই সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলি। কোনো কোনো স্কুলে আবার পড়ুয়াদের দেখাও পাওয়া যায় না। এমন অবস্থায়, বন্ধের মুখে শহরের এইরকম শতাধিক স্কুল।

প্রাথমিক, হাইস্কুল— সমস্ত ক্ষেত্রেই ছবিটা এক। কিন্তু একসময় এগুলোই ছিল মধ্যবিত্ত বাঙালি সন্তানদের বড় হওয়ার ঠিকানা। কত জনের কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে এখানে। কিন্তু আজ সেসব দিন অতীত। বেশ কিছু স্কুলে শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী থাকলেও, নেই পড়ুয়া। ক্লাসরুমের দরজায় ঝুলছে তালা। কোথাও আবার মেরেকেটে পাঁচজন, বা দশজন ছাত্র। অবিশ্বাস লাগলেও, কথাটি প্রবলভাবে বাস্তব।

কিন্তু এমন অবস্থা কেন? রোগটা যে কী, সেটা কিছুটা অনুমান করা যায়। খাস কলকাতা তো বটেই, শহরের বাইরেও নানা জায়গায় বেড়ে যাচ্ছে বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের সংখ্যা। ছেলে-মেয়েদের ভালো ইংরেজি শিক্ষিত করতে, সেই স্কুলগুলিই আজ ভরসা অভিভাবকদের। প্রচুর টাকা ব্যয় করে, সেখানে ভর্তি করাচ্ছেন তাঁরা। অ্যাডমিশনের সময় সেখানে দেখা যায় লম্বা লাইন। অথচ, বিনামূল্যে বই, ইউনিফর্ম, এবং পড়ার খরচ নামমাত্র হওয়া সত্ত্বেও রাজ্যের সরকারি স্কুলগুলির ওপর সেই ভরসা দেখাতে পারছেন না ওই অভিভাবকরা। কর্পোরেট দুনিয়ায় কাজ করতে গেলে ইংরেজি বলায় দক্ষ হতে হয়। এই মানসিকতা থেকেই ইংরেজি মাধ্যমের প্রতি আসক্তি বাড়ছে। এদিকে বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল যত বাড়ছে, ততই ব্যাকফুটে চলে যাচ্ছে এই স্কুলগুলি।

অবস্থা এমন যে, বেশ কিছু স্কুল নিজেদের বাংলা মাধ্যমের পাশাপাশি ইংরেজি মাধ্যমও শুরু করেছে। সেখানে ভিড় বাড়লেও, পাশেই থাকা বাংলা মাধ্যমে মাছি তাড়ানোর পরিস্থিতি। সম্প্রতি কলকাতার স্বনামধন্য পাঠভবন স্কুলটির বাংলা মাধ্যমও এই কারণে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মাত্র বছর দুয়েক আগেই কলকাতার ৭৫টি সরকারি স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এবার তার থেকেও জটিল পরিস্থিতি। প্রাথমিক, হাইস্কুল মিলিয়ে ১৩৫টি স্কুল বন্ধের মুখে।

রাজ্যের শিক্ষা দফতর এই পরিস্থিতিতে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু তাঁদেরকেই দায়ী করছেন শিক্ষাজগতের একাংশ। দীর্ঘদিন শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ, পরিকাঠামোর অভাব, শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতির অবাধ প্রবেশ— এই কারণগুলিও যে এমন অবস্থার জন্য দায়ী, সেই কথাই বলছেন তাঁরা। বাম আমলে ইংরেজি তুলে দেওয়ার কথাও মনে করাচ্ছেন কেউ কেউ। দিনের শেষে, সমাধানের উপায় কী, সেটা কোনো মহল থেকেই উঠে আসছে না। উঠে এলেও, সেটাকে কার্যকর করা হচ্ছে না। এদিকে হারিয়ে যাচ্ছে এই স্কুলগুলো। রাজনীতিকে কিছুক্ষণের জন্য সরিয়ে নিয়ে একবার কি ভাবা যায় না?