বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন লোকশিল্প, লোক ঐতিহ্য। অথচ, বেশিরভাগ সময় গ্রামের গণ্ডি ছাড়িয়ে শহর পর্যন্ত পৌঁছোয় না সেসব। বিভিন্ন সময় ছোট-ছোট একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হলেও, সামগ্রিকভাবে গ্রামীণ শিল্পের সঙ্গে শহর এখনও পরিচিত হয়নি পুরোপুরি। সেই গণ্ডি ভেঙে দিতেই আয়োজিত হল 'গ্রামকৃষ্টি উৎসব'। কলকাতার প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গনে। বিভিন্ন হস্তশিল্প, পিঠে সহ একাধিক জিনিসের সহাবস্থানের সাক্ষী হল শীতের কলকাতা। বেনজির না হলেও এমন উদ্যোগ ব্যতিক্রমী সন্দেহ নেই।
এই উৎসববের শুরু অবশ্য দু'বছর আগে। এ-বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে তৃতীয় বর্ষে পদার্পণ করল এই উৎসব। আজ, ৩০ ডিসেম্বর এই উৎসবের শেষ দিন।
বাংলার বিভিন্ন জায়গা থেকে শিল্পীরা তাঁদের তৈরি জিনিসপত্র নিয়ে যোগ দিয়েছেন এই উৎসবে। পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা থেকে পটচিত্র এনেছেন অমিত চিত্রকর। গৌতম সূত্রধর আবার পুরুলিয়ার মানুষ। চড়িদা গ্রাম থেকে মুখোশ নিয়ে এসেছেন তিনি। পেঁচা, গণেশ ও নানা কাঠের আসবাব নিয়ে বর্ধমানের নতুনগ্রাম থেকে হাজির বিজয় সূত্রধর। সবং-এর জয়ন্তী জানা এনেছেন ডোকরা, মাদুর, গয়না বড়ি। এছাড়াও বিজয় চিত্রকর, নীহাররঞ্জন মিদ্যা, ফুলজান চিত্রকর, শম্ভু রায় – পশ্চিমবাংলার বিভিন্ন জায়গা থেকে জড়ো হয়েছেন এখানে। সাজিয়েছেন পসরা। শুধু তাই নয়, রয়েছে খাবারের স্টলও। মিলছে পিঠে, পুলি ও খাঁটি মধুও।
গ্রাম বাংলার নানা জায়গা থেকে আসা মানুষজন প্রায় ৪০টি স্টল দিয়েছেন এখানে। উৎসব শুরু হয় বিজয় চিত্রকরের পটচিত্রের গান দিয়ে। এছাড়াও বিভিন্ন লোকশিল্পীদের গানও পরিবেশন করা হয়েছে গত কয়েকদিন। ২৪ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই উৎসব আক্ষরিক অর্থেই মিলনমেলা হয়ে উঠেছে গ্রামের সঙ্গে শহরের। কবি প্রসূন ভৌমিকের মস্তিষ্কপ্রসূত এই পরিকল্পনা প্রেস ক্লাবের সভাপতি স্নেহাশিস শূর ও সম্পাদক কিংশুক প্রামাণিক অত্যন্ত উৎসাহ ও আন্তরিকতার সঙ্গে প্রেস ক্লাব কলকাতার নিজস্ব উদ্যোগ হিসেবে গ্রহণ করেন। আজ এই ক্লাব দেশের এক ব্যতিক্রমী সাংবাদিকদের ক্লাব হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ গঠনমূলক নজির রাখছে।
প্রসূন ভৌমিক প্রহরকে জানালেন, "শহরের জিনিস এতদিন গ্রামে যেত। এবারে গ্রামের জিনিসও শহরে আসুক। আমরা চাই, এমন উদ্যোগ ছড়িয়ে পড়ুক কলকাতার কোনায়-কোনায়। আবাসনে, পাড়ার মাঠেও এমন মেলা বসুক। এতে গ্রামীণ শিল্পীদের পাশে দাঁড়ানোও হয়, ভালোমানের ও খাঁটি হস্তশিল্প আর খাদ্যসম্ভারের স্বাদও মেলে।"