রেলের বেসরকারিকরণ নিয়ে আগেই মুখ পুড়েছিল সরকারের। ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছিলেন সারা দেশের মানুষ। শুক্রবার রেলবোর্ড নতুন করে ঘোষণা করে দিল বেসরকারিকরণের পরে ভারতীয় রেলের ভাড়া নির্ধারণ করবে সংশ্লিষ্ট সংস্থারাই। রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান ভিকে যাদবের এই ঘোষণাই পুরনো বিতর্কের আগুনে যেন নতুন করে ঘৃতাহুতি দিল।
যদিও সরকার প্রথম থেকেই দাবি করে এসেছে রেল পরিবহণের গুণগত মান বৃদ্ধি করার জন্যই এই পদক্ষেপ। বেসরকারিকরণের মাধ্যমে লোকাল ট্রেনের গতিও বাড়বে বলে মত কেন্দ্রের। ইতিমধ্যেই আদানি এন্টারপ্রাইজ, বম্বার্ডিং ইনকর্পোরেট, অ্যালস্টম এসএ প্রভৃতি সংস্থা আগ্রহ দেখিয়েছে বিনিয়োগের জন্য। সবমিলিয়ে যার পরিমাণ হতে পারে ৭৫০ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি। অন্যদিকে জাপানের থেকে ঋণ নিয়ে বুলেট ট্রেনের প্রচলনের কথাও ভেবেছে কেন্দ্র।
তবে এই আধুনিকরণের জন্য বেসরকারিকরণকেই কেন বেছে নিতে হচ্ছে কেন্দ্রকে তাই বড়ো প্রশ্ন। যেখানে বার বার উল্লেখ করা হচ্ছে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’-র কথা। আর তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নির্ভর করা হচ্ছে দেশ-বিদেশের বেসরকারী সংস্থাদের ওপরে। তবে রেলের মতো ক্ষেত্রকে নিয়ন্ত্রণে সরকারের ভূমিকা কতটুকু? দেউলিয়া হতে বসা রেলের ভাঁড়ারের ক্ষত পূরণের জন্যই কি সরকারের এই সিদ্ধান্ত? উঠছে প্রশ্ন।
তবে রেল আগে থেকেই সাফাই গেয়েছে যে, একই রুটে বাস এবং প্লেনের পরিষেবা থাকায় বেসরকারি সংস্থাগুলি ভাববে ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে। ব্যবসা চালাতে গেলে তাঁরা কম মূল্যেই পরিষেবা দিতে আগ্রহী হবে, এমনটাই যুক্তি সাজাচ্ছে রেল বোর্ড। তবে সত্যিই কি তাই? এক ধাক্কায় ভাড়া আকাশে না পৌঁছালেও অনেকটাই যে বৃদ্ধি পাবে, তা বলাই বাহুল্য। দেশের বেশিরভাগ মানুষই এখনও প্রধান যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করেন রেলকে। রেলের দৈনিক যাত্রীসংখ্যা অস্ট্রেলিয়ার মোট জনসংখ্যার থেকেও বেশি। এই বিপুল সংখ্যক যাত্রীদের মধ্যে অধিকাংশই দরিদ্র, সংখ্যাগরিষ্ঠ। একার্থে বিপদে পড়তে চলেছেন তাঁরাই।
আরও পড়ুন
রেলের লিনেন পরিষেবা বন্ধ হতে পারে স্থায়ীভাবে, আবারও কর্মীছাঁটাই-এর সম্ভাবনা
আপাতত ১০৯টি রুটে ১১৫টি ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। পরবর্তীকালে বিভিন্ন লোকাল ট্রেনেও বেসরকারিকরণ হবে বলে জানিয়ে রেখেছে রেলমন্ত্রক। সর্বাধিক ৩৫ বছরের চুক্তি হতে পারে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলির সঙ্গে। ফলে বেসরকারি সংস্থাদের ‘স্বাধীন’ ভাড়া বৃদ্ধির ক্ষমতা দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে চলেছে মানুষের ওপর তা বলাই বাহুল্য। প্রশ্ন থাকছে, পরিষেবা ভালোর দোহাই দিয়ে রেল বোর্ডের এই সিদ্ধান্ত কতটা ন্যায়সঙ্গত? দেখার কতটা অর্থনৈতিক ধাক্কার সম্মুখীন হয় ভারতের সাধারণ মানুষ...
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
শহরতলির স্টেশনে চলমান সিঁড়ি এবং লিফট, সামাজিক দূরত্ববিধি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ রেলের