দক্ষিণ ভারতের পাঁচটি নদীর দূষণ আটকাতে প্রকল্প; ‘নমামি গঙ্গে’ কি আদৌ সফল?

ভারতবর্ষের সবচেয়ে বড়ো নদী গঙ্গা। এক অর্থে এদেশের পরিচয়ের সঙ্গে ওতপ্রতোভাবে জড়িয়ে এই নদীর নাম। কিন্তু যে গঙ্গাজল এখনও পবিত্র বলে মনে করেন অনেক মানুষ, সেই জলের মধ্যে দূষণের পরিমাণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই চিন্তিত পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যে গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান সহ একাধিক প্রকল্পের ফলেও কোনো সমাধান হয়নি। কিন্তু নমামি গঙ্গে প্রকল্পের ফলে গঙ্গার অবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে বলেই জানিয়েছে জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক। আর এই সাফল্য থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশের আরও ৫টি নদীর ক্ষেত্রেও একই ধরনের প্রকল্প নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তারা।

সম্প্রতি একটি ওয়েবিনারে এই উদ্যোগের কথা জানান ‘জল শক্তি’ প্রকল্পের কর্তারা। জানানো হয়েছে পেরিয়ার, কাবেরী, গোদাবরী, নর্মদা ও মহানদীর ক্ষেত্রে অনুরূপ প্রকল্প নেওয়া হবে। এই ৫টি নদীই দক্ষিণ ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নদী। কেরালার কৃষিকাজের অনেকটাই নির্ভর করে পেরিয়ার নদীর উপর। কিন্তু সম্প্রতি তার অবস্থা এমন, যে তাতে আর কৃষিকাজ সম্ভব নয়। ২০১৭ সালের পলিউশন ইন্ডেক্স তথ্য অনুযায়ী দেশের সবচেয়ে বিষাক্ত নদীর নাম পেরিয়ার। মানুষ তো দূরের কথা, অনুজীবের শরীরের পক্ষেও পেরিয়ারের জল অত্যন্ত ক্ষতিকারক।

তেমনই আবার দেশের মধ্যে সবথেকে বেশি রাসায়নিক পদার্থ মিশে রয়েছে কাবেরী নদীতে। আর নানা ধর্মীয় কাজের সূত্রে মানুষের শরীরেও ক্রমশ মিশছে এইসব দূষক রাসায়নিক। প্রায় একই অবস্থা গোদাবরী ও নর্মদার ক্ষেত্রেও। উত্তর ভারতে যেমন মানুষের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে গঙ্গা নদী, তেমনই দক্ষিণ ভারতের গুরুত্বপূর্ণ নদী গোদাবরী এবং নর্মদা। বিগত ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই দুই নদীতেই অক্সিজেনের পরিমাণ বিপদসীমার অনেক নিচে। আর মহানদীর অবস্থা তো বলাই বাহুল্য। জলের মধ্যে আবর্জনার পরিমাণ এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে এখন আর তাকে নদী বলে চেনাই যায় না।

জল শক্তি প্রকল্পের অধীনে আসন্ন উদ্যোগ যদি সত্যিই এইসমস্ত নদীকে বাঁচিয়ে তুলতে পারে তাহলে অসংখ্য মানুষের পাশাপাশি উপকৃত হবে দেশের অর্থনীতিও। তবে সন্দেহ এখনও থেকেই যায়। মে মাসের সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী নমামি গঙ্গে প্রকল্পের ফলে জলের উন্নতি প্রায় কিছু হয়নি। বরং লকডাউনের ফলে গঙ্গা অনেকটা দূষণমুক্ত হয়েছে। আর এই একই প্রভাব সম্ভবত বাকি নদীগুলির ক্ষেত্রেও পড়েছে। তবে তাও অতি সামান্যই। কারণ আনলক পর্যায়ের সময় থেকেই আবারও গঙ্গার জলে অক্সিজেনের পরিমাণ কমতে থাকে। অথচ নমামি গঙ্গা প্রকল্পের সাফল্য প্রচারের উদ্দেশ্যে কিছুদিন আগেই প্রধানমন্ত্রীর একটি গঙ্গাস্নানের দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়, পরে দেখা যায় সেই ছবি আসল নয়। গঙ্গার জল আদৌ ততটা স্বচ্ছ নয়। এমনকি এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলেও উত্তর মেলেনি জল-শক্তি প্রকল্পের আধিকারিকদের থেকে। অতএব শেষ পর্যন্ত এইসমস্ত উদ্যোগে আদৌ কতটা সাফল্য পাওয়া যাবে, সেবিষয়ে নিঃসন্দেহ হওয়ার অবকাশ নেই।

(সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন এবং সেন্ট্রাল পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ডের সমীক্ষা থেকে নদীগুলির পরিস্থিতি সম্বন্ধে তথ্য নেওয়া হয়েছে।)

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
নদীর ওপর দীর্ঘতম রোপ-ওয়ে চালু গুয়াহাটিতে, মাত্র ৮ মিনিটেই পাড়ি ২ কিলোমিটার