তিনি বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী দেশের রাষ্ট্রপ্রধান। সেই সঙ্গে এই দেশের প্রধানমন্ত্রীর ‘বিশেষ বন্ধু’ও বটে। তিনি আসবেন, তাই আয়োজনে কোনো ত্রুটি রাখা চলবে না। গরিবদের ভেঙে পড়া ঘরও তাঁর সামনে দেখানো চলবে না। দেশের মান তাহলে থাকবে কী করে! অতএব, তোলো পাঁচিল…
না, নতুন কোনো হীরক রাজার সিনেমার গল্প বলা হচ্ছে না। এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এই দেশেই। আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত সফরে আসবেন। তাঁর সঙ্গে গুজরাটের গান্ধীনগরে যাবেন স্বয়ং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আহমেদাবাদ এয়ারপোর্ট থেকে যাওয়ার রাস্তার দুইধারে থাকা বস্তি যাতে মার্কিন অতিথিদের ‘দৃষ্টি আকর্ষণ’ না করে, তার জন্যই বিশেষ নিদান দিয়েছে সেখানকার পৌরসভা। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দুই ধারেই ছয় থেকে সাত ফুট উঁচু পাঁচিল তৈরি করা হবে। প্রায় আধ কিলোমিটার রাস্তা ঘেরা থাকবে এই পাঁচিলে। দেশের দরিদ্র অবস্থা মিটুক কিংবা না মিটুক, বাইরের পৃথিবীর কাছে সেসব দেখানো চলবে না কোনোমতেই!
মনে পড়ছে না ‘হীরক রাজার দেশে’ সিনেমাটার একটি দৃশ্যের কথা? যেখানে হীরক রাজ্যের বর্ষপূর্তির উৎসব পালনের জন্য সমস্ত দরিদ্র, গরিব মানুষদের ঘর সরিয়ে দেওয়া হয়, তাদের উচ্ছেদ করা হয়। দেশের অবস্থার কোনো পরিবর্তন করা গেল না; কিন্তু বিশ্বের সামনে ঝা চকচকে হয়েই আসতে হবে। তাই, ঢেকে দাও দারিদ্র্য। তুলে দাও পাঁচিল। বোধহয় ভুলে যাচ্ছি আমরা, গোটা বিশ্বের কাছে ভারত আজও একটি উন্নয়নশীল তৃতীয় বিশ্বের দেশ। গরিব দেশ। যেখানে ধারাভি বস্তির মতো জায়গা একটি পর্যটনক্ষেত্র। অবস্থার উন্নতির চেষ্টা না করে, সেটাকে ঢেকে রাখা একপ্রকার ‘হাস্যকর’ উদ্যোগ নয়? এটা তো সেই উটপাখির মতো গল্প, যে মরুভূমির মাঝে দাঁড়িয়ে, বালির ভেতর মুখ গুঁজে ভাবে, আমাকে কেউ দেখছে না…