“সরকারি চাকরির পরীক্ষার জন্য যখন থেকে পড়ানো শুরু করি, তখন থেকেই কিছু জিনিস নজরে আসতে থাকে। প্রথমত এই পড়াটা আমরা ছড়িয়ে দিতে পারছি না। শুধু কলকাতা, তার আশেপাশের অঞ্চল বা অন্যান্য বড়ো শহরেই সীমাবদ্ধ। অন্যান্য জায়গায় পৌঁছচ্ছে না। এছাড়াও সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে বেশ কিছু ইউটিউব চ্যানেল আছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে প্রতিষ্ঠান হিসেবে সেরকম কোনো ডিজিটাল চ্যানেল ছিল না। সেখান থেকেই আমাদের উদ্যোগটা শুরু হল।”
প্রহরকে বলছিলেন অভিজিৎ অধিকারী। বাংলার অনেক ছাত্রছাত্রীদের কাছে তিনি ‘অভিজিৎ স্যার’। আর সেই পরিচয়ের সঙ্গেই জুড়ে আছে আরও একটা নাম— ‘যুবা প্লাস’। সরকারি চাকরির প্রস্তুতির জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম। একেবারে খোদ বাংলারই। রুটিন ধরে এখনও চলছে বিভিন্ন বিষয়ের ক্লাস। এই লকডাউনের মাঝে ক্লাস? ঘাবড়াবেন না, সবটাই হচ্ছে ইউটিউবে। একেবারে ঘরে বসেই সমস্ত প্রান্তের ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের প্রস্তুত করতে পারছেন। অভিজিৎবাবুরও তো লক্ষ্য ছিল এটাই।
নানা অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে এগিয়েছেন অভিজিৎবাবু। মাস্টার্স, বি.এড. পাশ করার পর বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষকতার কাজ করেছেন তিনি। বিষয় ছিল ভূগোল। নামী-অনামী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন। ভারতের নানা জায়গায় কাজের সূত্রে গেছেন। আর এত অভিজ্ঞতাই কিছু প্রশ্ন তুলে দিয়েছে তাঁর মনে।
ভারতের নানা জায়গায় সরকারি চাকরির প্রস্তুতির জন্য এত সুবিধা, এত প্ল্যাটফর্ম; সেরকম কি বাংলায় আছে? সর্বভারতীয় বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের অনলাইন চ্যানেল আছে, যার মাধ্যমে সমস্ত জায়গার ছাত্রছাত্রীদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। শুধু বাংলাকে কেন্দ্র করে এরকমটা নেই কেন?
এই প্রশ্ন থেকেই উদ্যোগ নেওয়ার শুরু। ২০১৯-এর ২৫ আগস্ট একটি ইউটিউব চ্যানেল খুললেন অভিজিৎ অধিকারী। নাম ‘যুবা প্লাস’। সেখান থেকেই যাত্রা শুরু। শুরুতে তিনজনে এই রাস্তা চলতে শুরু করেছিলেন। যত সময় গেছে আরও অনেকে এসেছেন, ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যাও বেড়েছে। আর সবথকে বড়ো কথা, পুরোটাই বাংলায় আয়োজন করা হয়। “যাতে পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত জায়গার পড়ুয়ারা বিষয়টা বুঝতে পারে, সেজন্যই বাংলায় শুরু করেছি আমরা। এর আগে এরকম উদ্যোগ সেভাবে নেওয়া হয়নি। তবে বিভিন্ন জিনিসের ইংরেজি টার্ম বা প্রশ্নগুলো ইংরেজি মাধ্যমেও রাখা থাকে। বোঝানোটা বাংলায় থাকে। লেখাটার ক্ষেত্রে ইংরেজি রাখা হয়। যাতে সর্বভারতীয় পরীক্ষায় গিয়ে পড়ুয়াদের অসুবিধা না হয়।”
ক্লাসরুমের চার দেওয়ালের গণ্ডি নয়, প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করেই সমস্ত জায়গায় পৌঁছে যাচ্ছেন অভিজিৎবাবু। তাও একদম বিনামূল্যে। তবে আরও ভাবনা চিন্তাও রয়েছে তাঁর মাথায়। কথাপ্রসঙ্গে বলছিলেন, “এখন আমরা শুধু সরকারি চাকরির জন্য রুটিন অনুযায়ী ক্লাস করাচ্ছি। এরপর আমাদের ইচ্ছা স্কুলের অন্যান্য বিষয় পড়ানোও যাতে শুরু করা যায়। তখন একটা ন্যুনতম সাবস্ক্রিপশনের ভাবনা আছে। যখন এই নতুন বিষয়টি শুরু হবে, তখন অভিভাবকরাও গোটা সিস্টেমে যুক্ত হবেন। তাঁদের সঙ্গে যাতে আমাদের শিক্ষকদের নিয়মিত যোগাযোগ থাকে, সেই ব্যবস্থাও আনতে চলেছি আমরা। অন্যদিকে, আমরা আমাদের পরিবারকে আরও বড়ো করতে চাইছি। তাই কেউ এগিয়ে আসতে চাইলে, স্বাগত জানাতে সবসময় প্রস্তুত আমরা।”
বাংলার সরকারি চাকরির জন্য প্রস্তুতিটা অনেকটাই কলকাতা, বা বড়ো শহর নির্ভর। কিন্তু যারা গ্রামে আছেন; যারা আসতে পারছেন না এত দূরে, বা এলেও অনেক খরচ হয়ে যাচ্ছে— তাঁরাও যাতে নিজের ঘরে বসে পড়াটা করতে পারেন, সেটাই লক্ষ্য শিক্ষকদের। সেই লক্ষ্য ‘যুবা প্লাস’-এরও। আজ আরও অনেক ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছেন তাঁরা। যত্ন নিয়ে প্রতিটা বিষয় বোঝাচ্ছেন। নতুন চিন্তা ভাবনা তৈরি করছেন। আর সবটাই চলছে বাংলাকে কেন্দ্র করে। বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করে, এখানকার ছেলেমেয়েদের কথা ভেবে। জেলার বিভিন্ন জায়গাতে যাতে আরও বেশি করে পৌঁছে যাওয়া যায়, সেটাই লক্ষ্য অভিজিৎ অধিকারী এন্ড কোং-এর।
Powered by Froala Editor