মাত্র তিনমাসের নোটিশেই ছেঁটে ফেলা যাবে সরকারি কর্মচারীদের, বিতর্কিত সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় সরকারের

একটা সময় সরকারি চাকরি মানেই ছিল সুরক্ষা। শুধু তাই নয়, দেশের একটি বৃহৎ পরিমাণ জনসংখ্যার মূল কর্মক্ষেত্রও ছিল সরকারি চাকরির উপর নির্ভরশীল। কিন্তু কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে বড়োসড়ো ধাক্কা খেতে চলেছে সরকারি চাকরির ক্ষেত্র। কেন্দ্র সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এবার তিন মাসের নোটিশেই যেতে পারে সরকারি চাকরি। সরকারি সমস্ত বিভাগে ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করছেন এমন কর্মচারীদের সার্ভিস রেকর্ড বা কর্মক্ষেত্রে তাদের অবদান যাচাই করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।

সরকারের তরফে জানানো হয়েছে যে, দেশের কর্মক্ষেত্রকে নতুনভাবে উজ্জীবিত করতেই এই সিদ্ধান্ত। সাধারণভাবে দেখতে গেলে যে কোনও কাজের জায়গাতেই কর্মীদের যোগ্যতা বা পারফরম্যান্স যাচাই করার একটি পদ্ধতি থাকেই। কাজের জায়গায় দক্ষতায় ঘাটতি পড়লে সে ক্ষেত্রে কর্মীর উপর কোপ পড়ারও একটা সম্ভাবনা থেকে যায়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকার যেভাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে, প্রশ্ন উঠছে সেটা নিয়েই।

৩০ বছরের বেশি সরকারি চাকরি করছেন এমন কর্মীদের কারুর বিরুদ্ধে অযোগ্য কিংবা দুর্নীতির অভিযোগ থাকলে তাদেরকে চিহ্নিত করে পাঠানো হবে আগাম অবসরে। দেশের স্বার্থেই কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত বলে জানানো হয়েছে সরকারি তরফে। বস্তুত সরকারি বেতনভুক্ত যে কোনও কর্মীর কর্মদক্ষতা বিচার করা এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে যে কোনও সরকারী কর্মচারীকে অবসর নিতে বাধ্য করার এক্তিয়ার সংবিধান অনুযায়ী সরকারের আছে। যদিও এই ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মীকে অবসর গ্রহণের পরে যথাযথ পেনশনের সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে যখন দেশের কর্মক্ষেত্রের অবস্থা শোচনীয়, তখন কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত আরো বড়ো আঘাত নিয়ে আসতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই এই সংক্রান্ত নির্দেশিকা পাঠানো শুরু হয়ে গিয়েছে সমস্ত কেন্দ্রীয় দফতরের সেক্রেটারিদের কাছে।

স্বাভাবিকভাবেই কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের ফলে সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করেছেন সরকারি কর্মচারীরা। কর্মচারীদের বিভিন্ন ইউনিয়নের তরফে বৃহত্তর আন্দোলনের কথাও ভাবা হচ্ছে। কিন্তু একথা অনস্বীকার্য যে, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারি কর্মচারীদের গাফিলতির নিদর্শনও কিন্তু নেহাত কম নয়। বরং সরকারি চাকরি পেয়ে যাওয়ার পর নিশ্চিন্ত হয়ে গিয়েই কাজে ঢিলা দেওয়ার ঘটনা সামনে এসেছে একাধিকবার। তবুও হঠাৎ করে বর্তমান পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত অর্থনীতির উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলেই মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। জোর করে অবসর গ্রহণের পথে না হেঁটে বরং কর্মীদের দক্ষতা কিভাবে আরও বাড়ানো যায় সেই দিকে সরকারের নজর পড়লেই বোধহয় জনগণ আরো উন্নত পরিষেবা পেতে পারত তাদের থেকে। যদিও সরকারের বক্তব্য অনুযায়ী সরকারি কাজে গতি আনতে এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছিল। তবে সরকারি কোষাগারের বর্তমানে কী হাল, সে বিষয়ে এই ঘটনা থেকে একটা আভাস কিন্তু পাওয়াই যায়!

আরও পড়ুন
কর্মী ছাঁটাই-এর পর বেতনেও কোপ করোনার, দেশের গড় বেতন বৃদ্ধি কমল ৫.১ শতাংশ

সরকারি কর্মচারীদের সংগঠনগুলিও ইতিমধ্যেই সাবধান বার্তা দিয়ে রেখেছে। তাদের আশঙ্কা, এই সার্কুলারটির মাধ্যমে সরকার অপছন্দের কর্মী বা অফিসারদের এবার সহজেই সরিয়ে দিতে পারবে চেয়ার থেকে। এর আগে থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল রেল এবং টেলিকমের সঙ্গে যুক্ত দপ্তরগুলি থেকে কর্মী সংকোচনের পদ্ধতি। তার সঙ্গে বাকি সরকারি ক্ষেত্রগুলিকেও যোগ করে কেন্দ্র যে তাদের পূর্ববর্তী সিদ্ধান্তের আরও একটু প্রসার ঘটাল, সে কথা এখন পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে দিনের আলোর মতো। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায়, এর আগে বিহারেও অনেকটা এই ধরণেরই নির্দেশিকা জারি হয়েছিল। জানানো হয়েছিল ৫০ বছরের বেশি পুলিশকর্মীদের কাজ এবং পারফরমেন্সের উপর নজর রাখতে হবে নিয়মিত। কাজে গাফিলতি দেখা গেলে স্বেচ্ছা অবসরে পাঠানো হবে সেই পুলিশকর্মীকে। প্রতিবাদ উঠেছিল সেই ক্ষেত্রেও। জানানো হয়েছিল যে এর ফলে বিরুদ্ধ কণ্ঠকে দাবিয়ে দেওয়া হচ্ছে জোর করেই।

'হাতে না মেরে ভাতে মারা', এই প্রবাদ যে সত্যি হয়ে একদিন নেমে আসবে খোদ সরকারি কর্মচারীদের উপরেই, সেকথা বোধহয় আন্দাজ করা যায়নি এইভাবে। সুতরাং বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন চাকরির সংকুলান যেখানে প্রায় স্তব্ধ, সেখানে বয়স্ক কর্মচারীদের উপর এই আঘাত আসলে অর্থনীতির উপর কীভাবে প্রভাব ফেলে, সেই দিকেই দুরুদুরু বুক নিয়ে তাকিয়ে আছে এখন অর্থনৈতিক সমস্ত ক্ষেত্রই। যদিও সরকারের এই সিদ্ধান্ত যদি সরকারি কর্মচারীদের আরো একটু নড়েচড়ে বসতে বাধ্য করে, তবে ছবিটা আগামীদিনে অন্যরকম হলেও হতে পারে। সেই শুভর আশাতেই এখন দিন গুনছে সবাই!

আরও পড়ুন
কর্মীরা বেতনহীন মাসের পর মাস, সঙ্গে ছাঁটাইয়ের হুমকি; বিএসএনএলের বর্তমান পরিস্থিতির পিছনে কোন রাজনীতি?

Powered by Froala Editor

More From Author See More