ব্রিটিশ সেনাবাহিনী ছেড়ে আজাদ হিন্দ ফৌজ, ফাঁসি হল গোর্খা মেজরের

১৯৪৪-এর ২৫ আগস্ট। দিল্লির সেন্ট্রাল জেলের ফাঁসির মঞ্চে উঠলেন এক গোর্খা সৈনিক। তার আগের দিনই নিজের সদ্য বিবাহিত স্ত্রীর সঙ্গে শেষবার দেখা হয়েছে। হয়ত সেই স্মৃতিও তখন ভেসে আসছিল। কিন্তু সেই সবকিছুর থেকেও তাঁর কাছে বড় ছিল নিজের দেশের স্বাধীনতা। রুমাল উড়ল। শহিদ হলেন মেজর দুর্গা মাল্লা, ব্রিটিশ ভারতের গোর্খা সেনাবাহিনীর খাস রেজিমেন্টের প্রথম সৈনিক যিনি দেশের জন্য প্রাণ দিলেন।

১৯১৩ সালে উত্তরাঞ্চলের এক গোর্খা পরিবারে জন্ম নেওয়া দুর্গার ছোটবেলা থেকেই খেলা এবং সামাজিক কাজের প্রতি উৎসাহ ছিল। অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন তিনি। স্কুলে পড়তে পড়তেই স্বাধীনতা সংগ্রামের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হন। ক্লাস নাইনে পড়ার সময়, রাতের অন্ধকারে কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে গোর্খা ব্যাটেলিয়ন চত্বরে দেশাত্মবোধক পোস্টার লাগান দুর্গা। পরবর্তীকালে তিনিই যুক্ত হন গোর্খা রাইফেলসের ২/১ ব্যাটেলিয়নে, ১৯৩১ সালে।

১৯৪১ সাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ সময়। তখন সারদা মাল্লা-র সঙ্গে সদ্য বিয়ে হয়েছে তাঁর। সেই সময়ই বিশ্বযুদ্ধের মঞ্চে পা পড়ে দুর্গা মাল্লা-র। বীরত্বের সঙ্গে লড়েনও তিনি। কিন্তু মন তখন পড়ে আছে স্বাধীনতার যুদ্ধের জন্য। আর সেই সন্ধিক্ষণেই তাঁর সঙ্গে সংযোগ আজাদ হিন্দ ফৌজের। ১৯৪২ সালে সেখানে যোগদান করেন তিনি। একা তিনিই নন, তাঁকে দেখে আরও অনেক গোর্খা সৈন্য যুক্ত হন নেতাজির সঙ্গে। নিজের সাহসিকতা ও বুদ্ধিমত্তার জন্য ‘মেজর’ উপাধিও পান তিনি।

তার পরের গল্প আমরা সবাই ইতিহাস বইতে পড়েছি। কীভাবে আজাদ হিন্দ ফৌজ ব্রিটিশদের কাছে একটা ত্রাস হয়ে উঠেছিল, সে এক রূপকথা। কিন্তু সব রূপকথারই একটা শেষ থাকে। জাপানের পরাজয়ের সঙ্গে সঙ্গে আজাদ হিন্দ ফৌজও দুর্বল হতে থাকে। একে একে সদস্যরা গ্রেফতার হতে থাকেন। এইরকম সময় ১৯৪৪ সালে মণিপুর থেকে গ্রেফতার হন দুর্গা। তারপর লালকেল্লায় বন্দি, ট্রায়াল, এবং সবশেষে ফাঁসির ঘোষণা। দেশের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করলেন দুর্গা মাল্লা। জেনে যেতে পারলেন না, মাত্র তিনটে বছর পরেই স্বাধীনতার সেই মুহূর্তটি আসবে।

বর্তমান সময় গোর্খা সমস্যার কথা আমরা প্রায়ই শুনতে পাই। তাঁরা নাকি নিজেদের জন্য একটা আলাদা অঞ্চল চাইছেন। দুর্গা মাল্লা-র মতো স্বাধীনতা সংগ্রামীরা নিজেদের জাতিগত পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে দেশের জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন। গোর্খাদের সমস্যা এবং যাবতীয় ব্যাপারগুলো অবশ্যই আলাদা আলোচনার বিষয়। আজ ধর্ম ও জাতিগত বিদ্বেষে দীর্ণ ভারতের এই ছবি আমাদের দীনতার কথাই বারবার ফুটিয়ে তুলছে না?