গতকাল গুগল-এর হোমপেজ খুলে একটি ডুডল হয়তো অনেকেই দেখেছেন। ডুডলে এক নৃত্যরতা মহিলার ছবি ফুটে উঠেছিল। আর তিনি যে একজন ভারতীয়, সেটাও হয়তো বুঝতে পেরেছেন অনেকেই। ডুডলের আড়ালে থাকা সেই মানুষটির নাম জোহরা সায়গল। ১৯৪৬ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর তাঁর সিনেমা ‘নীচা নগর’ কান চলচ্চিত্র উৎসবের পর্দায় প্রদর্শিত হয়। আর সেবারেই তিনি উৎসবের শ্রেষ্ঠ সম্মান পাল্ম দর সম্মানে সম্মানিত হয়েছিলেন। সেই দিনটির কথা মাথায় রেখেই ৬৬ বছর পর একই দিনে শ্রদ্ধা জানাল গুগল।
১৯১২ সালে উত্তরপ্রদেশের সাহারনপুরে জন্মগ্রহণ করেন জোহরা বেগম মমতাজুল্লা খান। তবে শৈশবের বেশিরভাগ সময়টাই কাটে জার্মানিতে। সেখানে পাশ্চাত্যের ব্যালে ডান্সের শিক্ষা অর্জন করেন জোহরা বেগম। আর এই সময়েই একটি ইন্টারন্যাশানাল ট্যুরের সূত্রে যোগাযোগ হয়ে যায় ভারতীয় নৃত্যশিল্পের কিংবদন্তি উদয়শঙ্করের সঙ্গে। তাঁর আন্তর্জাতিক দলে যোগ দিলেন জোহরা বেগম।
উদয় শঙ্করের দলে এসেই নিজের জীবনসঙ্গীর সন্ধান পেলেন জোহরা বেগম। ১৯৪২ সালে কামেশ্বর সায়গলের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলেন তিনি। আর সেই দশকেই পর্দায় আত্মপ্রকাশ জোহরা সায়গলের। প্রথম দিকে ব্রিটিশ টেলিভিশন এবং সিনেমার পাশাপাশি বলিউডেও কাজ করে গিয়েছেন তিনি। ‘নীচা নগর’ ছাড়াও ‘আফসর’ সিনেমার কাজ করেন তখনই। পরবর্তীকালে অবশ্য নৃত্যশিল্পেই পুরোপুরি নিয়োগ করে দেন নিজেকে। তবে বলিউডের বেশ কিছু সিনেমাতেও আমরা তাঁর অভিনয় দক্ষতার পরিচয় পেয়েছি। এর মধ্যে ‘চিনি কম’, ‘হাম দিল দে চুকে সনম’, ‘দিল সে’, ‘কভি খুশি কভি গম’ প্রভৃতি সিনেমার নাম করতেই হয়। ২০০৭ সালে ‘সাবারিয়া’ সিনেমায় শেষ অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে।
সারা জীবনে অসংখ্য সম্মান পেয়েছেন জোহরা সায়গল। ১৯৬৩ সালে পেয়েছিলেন সঙ্গীত-নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কার। ১৯৯৮ সালে পদ্মশ্রী, ২০০২ সালে পদ্মভূষণ এবং ২০১০ সালে পদ্মবিভূষণ; তিনটি পদ্মপুরস্কারই পেয়ছেন তিনি। এছাড়াও পেয়েছেন কালিদাস পুরস্কার, সঙ্গীত-নাটক অ্যাকাডেমি ফেলোশিপ। ২০১৪ সালে ১০২ বছর বয়সে দিল্লির বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন জোহরা সায়গল। শুধু থেকে গিয়েছে তাঁর অসংখ্য সিনেমা এবং নাচের রেকর্ডিং। আর অসংখ্য ছাত্রছাত্রীর মধ্যে থেকে গিয়েছে তাঁর শিক্ষা।
Powered by Froala Editor