আলিপুরদুয়ারের একটি স্কুলে রসায়ন নিয়ে শিক্ষকতা করেন কৌশিক সরকার। মধ্যবিত্ত জীবনে ক্রেডিট কার্ডের প্রয়োজন হয়নি কখনও। কিন্তু এই একটি জিনিসের জন্যই বছর দুয়েক আগে বায়না ধরে তাঁর ৮ বছরের ছোট্ট ছেলে অনুব্রত। হঠাৎ ভাবছেন নিশ্চই, ক্রেডিট কার্ড নিয়ে ওইটুকু একটা ছেলের কী প্রয়োজন! কৌশিকবাবুও অবাক হয়েছিলেন। অনুব্রত সেদিন জানিয়েছিল, সে তার তৈরি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন গুগল প্লে স্টোরে পাবলিশ করতে চায়। অবাক হলেন? হ্যাঁ, মাত্র ৮ বছরেই সমস্ত কোডিং-ডিকোডিং এবং সিকিওরিটি প্যাচ নিয়ে একটা সম্পূর্ণ মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন বানিয়ে ফেলেছে অনুব্রত। আর শেষ পর্যন্ত কৌশিক বাবু ব্যাঙ্ক থেকে ক্রেডিট কার্ড জোগাড় করে সেই অ্যাপ্লিকেশন গুগল প্লে স্টোরে পাবলিশ করার ব্যবস্থাও করেছেন।
এখন অনুব্রতর বয়স ১০। স্থানীয় একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ক্লাস ৫-এ পড়াশুনো করে সে। ইতিমধ্যে তার তৈরি ৬টি অ্যাপ্লিকেশন পাওয়া যায় গুগল প্লে স্টোরে। বন্ধুরা যেখানে সবসময় মোবাইলে গেম খেলতে ব্যাস্ত, অনুব্রত সেখানে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, তার গেম খেলতে ভালো লাগে না। কিন্তু গেম বানাতে ভালো লাগে। লুডো, লিজেন্ডারি রানার্স, পিঞ্চহিটার ব্যাটসম্যান; এসব গেম পৃথিবীর সমস্ত দেশের মানুষ ডাউনলোড করতে পারে, চিন ছাড়া।
তবে শুধুই গেমিং অ্যাপ নয়, অনুব্রতর তৈরি অ্যাপের তালিকায় আছে 'মিট' নামের একটি চ্যাট অ্যাপ্লিকেশনও। এর কাজকারবার অনেকটাই হোয়াটসঅ্যাপের মতোই। তবে আরও বেশ কিছু সুযোগ আছে এখানে। যেমন বিশেষ কিউ আর কোড ব্যবহার করে কেউ তার চ্যাট কোনো বন্ধুর সঙ্গে শেয়ার করতে পারে। এবং অনায়াসে পাঠিয়ে দিতে পারে যেকোনো ফরম্যাটের ফাইল। আর এই সবটাই সম্পূর্ণ নিরাপদ। পাসওয়ার্ড এবং সিকিওরিটি প্যাচ দিয়ে সুরক্ষিত।
ছোট্ট অনুব্রতর এই কীর্তিতে অবাক তার বাবা-মাও। মাত্র সাড়ে চার বছর বয়সে যখন সে সৌরভ গাঙ্গুলির সঞ্চালনায় একটি রিয়েলিটি শোতে একের পর এক সমস্ত দেশ এবং রাজ্যের রাজধানীর নাম নির্ভুলভাবে বলে গিয়েছিল, অবাক লেগেছিল তখনই। কিন্তু সেটা আজকের বিস্ময়ের কাছে প্রায় কিছুই নয়। ছেলের কম্পিউটারের প্রতি আগ্রহ দেখে তাকে একটি কম্পিউটার কিনে দিয়েছিলেন কৌশিকবাবু। কিন্তু তিনি বা তাঁর স্ত্রী শান্তা ভট্টাচার্য, কেউই এর ব্যাপারে বিশেষ কিছু জানেন না। ইন্টারনেটের সাহায্যেই কোডিং-ডিকোডিং, জাভা প্রোগ্রামিং, এইচটিএমএল শিখেছে অনুব্রত। ক্লাস ১০-এর দিদির সঙ্গে বসে এইচটিএমএলের প্রশ্নের উত্তর তৈরি করে সেও। অ
অবশ্য এর মধ্যেই একটা আক্ষেপের সুর কৌশিকবাবুর কথায় স্পষ্ট। তাঁর পরিচিত অনেককেই ছেলের তৈরি অ্যাপ ব্যবহার করতে রাজি করাতে পারেননি তিনি। গুগল প্লে স্টোরের স্বীকৃতি পাওয়ার পরেও নিরাপত্তার ব্যাপারে অনেকের মধ্যেই আছে সন্দেহ। কৌশিকবাবুর কথায়, প্রচার করার মতো সামর্থ্য তো তাঁর নেই। তাই এই বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতার দৌড়ে বড়ো বড়ো কোম্পানির কাছে পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছে অনুব্রতর। ছোট্ট অনুব্রত অবশ্য এসব নিয়ে তেমন চিন্তিত নয়। সে নতুন নতুন আবিষ্কারেই খুশি। সেইসঙ্গে সে স্বপ্ন দেখে, একদিন রোবোটিক্স নিয়ে পড়াশুনো করে সে আরও বিরাট কিছু আবিস্কার করবে। তাক লাগিয়ে দেবে সারা পৃথিবীকেই। অবশ্য এই বয়সেও সে তাক লাগিয়ে দেয়নি কি? তার কীর্তির কথা শুনে বিস্ময় জাগে না মনের মধ্যে?
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
করোনা-প্রতিরোধে বিশেষ মাস্ক তৈরি বর্ধমানের কিশোরীর, স্বীকৃতি দিল কেন্দ্রও