ছত্তিশগড় থেকে গোয়ায় বিদ্যুৎ সঞ্চালনের প্রকল্পের জন্য কাটা পড়েছিল ২৬০০-এর বেশি গাছ। তবে এই ১৫০০ কোটি টাকার প্রোজেক্টের জন্য প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল গাছ কাটার ক্ষতিপূরণ স্বরূপ বৃক্ষরোপণের। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি কার্যত কথার কথা হয়েই রয়ে গেছে। বাস্তবে সেই কাজ এগোয়নি এতটুকুও। এবার আধিকারিকরা সেই অভিযোগের আঙুল তুললেন বিদ্যুৎ প্রকল্পের দিকে।
গোয়া-তামনার ট্রান্সমিশন প্রোজেক্ট লিমিটেডের এই প্রকল্প সারলাইট পাওয়ারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েই কাজ চালাচ্ছে। আর তার জন্যই সুকতোলিম অঞ্চলে কাটা হয়েছিল ২৬৭০টির বেশি গাছ। চুক্তি হয়েছিল এর বদলে ৮১০০টি ফলের গাছ রোপণ করবে ওই সংস্থা। যেগুলির উচ্চতা হবে ৬ ফুট। এবং ৩ বছরের মধ্যেই পূর্ণ দৈর্ঘ্যের বৃক্ষে পরিণত হবে। তারপর পেরিয়ে গেছে দীর্ঘ এক বছর। এখনও অবধি মাত্র ৭০০টি গাছ কেবল রোপণ করা হয়েছে।
দক্ষিণ গোয়ায় ১০ হেক্টর ব্যক্তিগত মালিকানাভুক্ত জমির এই গাছ কাঁটা হয়েছিল গত বছর জুলাই থেকে এই বছর ফেব্রুয়ারির সময়ের মাঝে। ১৯৮৪-র গোয়া-দমন-দিউ বনভূমি সংরক্ষণ বিলের আওতায় এই প্রকল্পের জন্য অনুমতি পেয়েছিল এই সংস্থাটি। ২০১৯ এর ২ ফেব্রুয়ারি গোয়ার পরিবেশমন্ত্রী মনোহর পারিকর সাক্ষর করেন এই চুক্তি। তবে মার্চেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। গাছ নিধনের যজ্ঞ শুরু হয়েছিল কার্যত তারপর থেকেই।
১৯৮৪-র সেই আইনে বলা হয় ব্যক্তিগত জমির গাছ কাটার অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। তবে বনদপ্তরের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন সেখানে ব্যক্তিগত বনাঞ্চলের কথা উল্লেখ করা হয়নি কখনোই। ফলে রাজ্য আইনের মাধ্যমে এই বৃক্ষচ্ছেদনের ঘটনা কার্যত আইনানুগ নয়। ১৯৮৪-র আইনে উল্লেখিত রয়েছে যদি কোনো ব্যক্তিগত মালিকানাভুক্ত জমি হয়, তাহলেও একমাত্র বৃক্ষচ্ছেদন করা যাবে যদি ক্যানোপি ঘনত্ব ০.৪ এর কম হয়। এবং অবশ্যই তার আয়তন ৫ হেক্টরের বেশি হতে হবে।
আরও পড়ুন
অতিরিক্ত বৃক্ষরোপণ ডেকে আনতে পারে বিপদ, জানাচ্ছে গবেষণা
ডেপুটি কনসার্ভেটর এবং পরিবেশকর্মীদের প্রকাশ করা তথ্য সেখানেই তুলে ধরছে নতুন বিতর্ক। এই অঞ্চলের গর ক্যানোপি ঘনত্ব ০.৭ এর কাছাকাছি। পাশাপাশিই কেটে ফেলা বৃক্ষগুলির মধ্যে অধিকাংশই পশ্চিমঘাট পর্বতমালার বিরল অরণ্য প্রজাতির। তা সত্ত্বেও গাছ কাটার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল কেন, উঠছে সেই প্রশ্নই। ধোঁয়াশা ঘনীভূত হচ্ছে অনুমতি দেওয়ার আগের রিপোর্ট ঘিরে। বিদ্যুৎ সংস্থাটি জানিয়েছে ২০১৯ এর মধ্যেই ৫০০টি গাছ রোপণ করা হয়েছিল। ৪০০টি গাছ রোপণের প্রকল্প আটকে রয়েছে জায়গার অভাবে। আরও ১০০টি গাছ বনদপ্তরের আধিকারিকদের হাতে রোপণের জন্য তুলে দেওয়া হবে খুব তাড়াতাড়িই।
আরও পড়ুন
বৃক্ষরোপণ করবেন লকডাউনে কাজ হারানো শ্রমিকরা, বিকল্প জীবিকার পরিকল্পনা পাকিস্তান সরকারের
তবে বনদপ্তরের সাফ দাবি, প্রতিশ্রুতির বিপরীতে গিয়েই কাজ করছে এই সংস্থা। প্রতিটি বৃক্ষরোপণ এবং তার জন্য জায়গার সংকুলান করার দায়িত্ব পুরোটাই নিয়েছিল সংশ্লিষ্ট সংস্থাটি। এই প্রকল্পের জন্য আরও ০.৫৫ হেক্টর জমিতে রাস্তা তৈরি করার জন্য আবেদন করেছে এই সংস্থাটি। ডেপুটি কনসার্ভেটর জানান, ওই এলাকা বন্য শূকর, সম্বার হরিণ, বন্য খরগোশ এবং বিভিন্ন প্রজাতির সাপের বসবাস। কড়া ভাষায় উত্তর দিয়েছেন গোয়ার বর্তমান পরিবেশমন্ত্রী নিলেশ কাব্রালও। রোপণ করা বৃক্ষগুলি পাঁচ বছরের মধ্যে বড়ো না হলে আইনমাফিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। পাশাপাশিই বাকি থেকে গাছগুলির রোপণ না হলে বাড়তি কোনো অনুমতিও মিলবে না। তবে এসবের মধ্যেও নিরুত্তর বিদ্যুৎ সংস্থা...
আরও পড়ুন
গ্রামে গ্রামে বৃক্ষরোপণ, প্রাকৃতিক ‘অক্সিজেন ব্যাঙ্ক’ এলাহাবাদে
Powered by Froala Editor