প্রায় ২০০ বছরের প্রাচীন একটি বটগাছ। তার কুঠুরিতেই বাসা বেঁধে থাকে একটি সিলভার স্নেক। বেশ নিরাপদ একটি আশ্রয়। কিন্তু আগস্টের শুরুতে ব্যাপক বর্ষণে সেই বটগাছটিও মাটি থেকে উপড়ে পড়ল। প্রায় ১৫ দিন সেইভাবে ছিল সাপটি। কিন্তু এরপরেই দেখা গেল, একদল মানুষ এসে অনেক ভারী ভারী যন্ত্রপাতি আর দড়ি দিয়ে সোজা করে দাঁড় করাল গাছটিকে। সাপটা মাঝে মাঝে উঁকি দিয়ে দেখছিল সেইসব কাজ। দেখে তার বেশ অবাক লাগছিল। কাজ শুরু হলেই কুঠুরির মধ্যে মুখ লুকিয়ে নিচ্ছিল, আবার কর্মীরা বিরতি নিলেই কুঠুরি থেকে বেরিয়ে এসে দেখছিল, ব্যাপারটা কী? এভাবে যে হারানো বাসস্থান ফিরে পাবে, সেটা সে কল্পনাও করেনি।
এমনটা যে ঘটা সম্ভব, কল্পনা করেননি সেবাস্তিনো ফার্নান্দেজও। তাঁর বাড়ির উঠোনেই গাছটির অবস্থান। গোয়ার সমুদ্রতটে দুপুরবেলায় ডাব হাতে গিয়ে বসেন সেবাস্তিনো। একটু বিকেল হলেই এসে ভিড় করেন দেশ-বিদেশের পর্যটক। স্পিকারে গান চালিয়ে শুরু হয় নাচ। মেতে ওঠে পুরো এলাকা। কিন্তু ৪ আগস্ট সকালে বাড়ির দরজা খুলেই সেবাস্তিনো দেখেন গাছটি জলের দাপট সহ্য করতে না পেরে পড়ে গিয়েছে। তবে এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই আমেরিকা-রাশিয়া সহ নানা দেশ থেকে চাপ আসতে থাকে। এই বুড়ো বটগাছের সঙ্গে যে প্রত্যেকেরই স্মৃতি জড়িয়ে। আর অবশেষে সেই খবর পেয়ে হায়াদ্রাবাদ থেকে ছুটে আসেন বৃক্ষ সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞ মার্ক ফ্রান্সিস। মূলত তাঁর উদ্যোগেই গাছটিকে আবার নিজের জায়গায় প্রতিস্থাপিত করা হয়। আর পুরো কাজে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে গোয়া প্রশাসনও।
গোয়ার সাধারণ মানুষ মনে করছেন, পশ্চিমঘাট পর্বতকে ঘিরে থাকা বনভূমিতে যেভাবে একের পর এক বৃক্ষচ্ছেদন চলছে, তার বিরুদ্ধেই এক প্রতীকী প্রতিবাদ এই বৃক্ষ প্রতিস্থাপন। শুধু পশ্চিমঘাট পর্বতই নয়, ক্রমশ সারা পৃথিবী থেকে জঙ্গল কমে আসছে। মানুষের বিভিন্ন প্রকল্পের পাশাপাশি আছে প্রাকৃতিক দুর্যোগও। কিছুদিন আগে ঘুর্ণিঝড় আমফানে পশ্চিমবঙ্গেই ৫০০০-এর বেশি গাছ উৎপাটিত হয়েছে। এর মধ্যে অবশ্য ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছিল কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন। রবীন্দ্র সরোবরের আশেপাশে ১৫০-টির বেশি গাছ প্রতিস্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছিল সংস্থা। তার মধ্যে ১২০-টির বেশি গাছ স্বচ্ছন্দে বেঁচে আছে। এক্ষেত্রে কি আরও বেশি পরিমাণে উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব নয়? আমফানের তাণ্ডবে সুন্দরবন থেকে যশোর রোড পর্যন্ত যে অসংখ্য গাছ উপড়ে যায়, তাদেরও কি একইভাবে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হত না? নাকি মানুষ আসলে এখনও এই নির্বাক জীবদের জীবনকে গুরুত্ব দিতে প্রস্তুত নয়? এই প্রশ্ন থাকল পাঠকদের কাছেই।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
গ্রামবাসীদের মিলিত উদ্যোগে রক্ষা পেল মহারাষ্ট্রের ৪০০ বছরের পুরনো বটগাছ