২০১৫ সাল। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের বুকে অনুষ্ঠিত হয়েছিল জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন। বিশ্বের ১৯৬টি দেশের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতেই সে-বছর স্বাক্ষরিত হয়েছিল একটি বিশেষ চুক্তি। প্যারিস অ্যাকর্ড বা প্যারিস এগ্রিমেন্ট-খ্যাত এই চুক্তিতে বলা হয়েছিল ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণ আটকে রাখতে হবে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। অর্থাৎ, প্রাক-শিল্পবিপ্লব যুগ এবং আজকের তাপমাত্রার তফাৎ ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে আবদ্ধ রাখাই ছিল এই চুক্তির মূলমন্ত্র। আর এই লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানোর জন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলির কাছে গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমন কমানো-সহ একাধিক পদক্ষেপ নেওয়ার আর্জি জানিয়েছিল রাষ্ট্রপুঞ্জ (UN)। তবে শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হল রাষ্ট্রপুঞ্জের এই উদ্যোগ।
সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, আগামী ৫ বছরে রেকর্ড পরিমাণ বদল আসবে পৃথিবীর তাপমাত্রায় (Temperature)। এমনকি ৬৬ শতাংশ সম্ভাবনা রয়েছে, ২০২৭ সালের মধ্যেই ‘১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস’-এর বিপদসীমা লঙ্ঘন করবে বৈশ্বিক তাপমাত্রা। না, কোনো পৃথক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা গবেষণা সংস্থা নয়, এই বিশেষ রিপোর্টটি প্রকাশ করেছে খোদ জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক শাখা সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন’।
উল্লেখ্য, বিগত কয়েক বছর অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে পৃথিবীর তাপমাত্রা। ২০২০ সালে গবেষকরা জানিয়েছিলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের চৌকাঠ পেরোনোর সম্ভাবনা প্রায় ২০ শতাংশ। গত বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৫০ শতাংশ। এবার এক বছরের মধ্যে সেই সম্ভবনা পৌঁছাল ৬৬ শতাংশে। পাশাপাশি আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই, বিশ্বের ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণতম বছর প্রত্যক্ষ করবে মানব সভ্যতা— সেই সতর্কতাও দিয়েছেন গবেষকরা। উষ্ণতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আগামীতে একইভাবে বৃদ্ধি পাবে ঘূর্ণিঝড়, দাবানল, তাপদাহ এবং খরার মতো ঘটনাও।
মানব সভ্যতার অনিয়ন্ত্রিত এবং অপরিকল্পিত বিকাশ, উন্নয়ন, কার্বন ও অন্যান্য গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমন এবং এল নিনো— যৌথভাবে দায়ী এই অস্বাভাবিক পরিবর্তনের জন্য। তবে এখনই আশা ছাড়তে নারাজ গবেষকরা। রিপোর্ট অনুযায়ী, অনেকাংশেই কমেছে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার। পরিবর্তে অপ্রচলিত শক্তির ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে উন্নত এবং উন্নতিশীল দেশগুলিতে। ফলে, চাইলে এখনও কমিয়ে আনা সম্ভব গ্রিন হাউস গ্যাসের পরিমাণ। নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব তাপমাত্রাকে। তবে উপযুক্ত পদক্ষেপ না-নেওয়া হলে ২০৮০ সালের মধ্যে তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণ ‘২ ডিগ্রি সেলসিয়াস’-এর মধ্যে আটকে রাখা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বলার অপেক্ষা থাকে না, তেমনটা হলে বড়ো বিপর্যয় ঘনিয়ে আসবে মানব সভ্যতার ওপর…
Powered by Froala Editor