মাত্র ৩৯টি পরিবার নিয়ে একটি গ্রাম, পাহাড়ের কোলে। তবে গ্রীষ্মকাল এলেই সেই পরিবারগুলিও ভাগ হয়ে যায়। কাশ্মীরের কুমিক গ্রাম (Kumik Village) থেকে প্রায় ২০টি পরিবার তখন নেমে আসে কয়েক কিলোমিটার নিচে মানথাং মালভূমি (Manthang Plateau) অঞ্চলে। কারণটা আর কিছুই নয়, কুমিক গ্রামে আর কৃষিকাজের সুযোগ নেই। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আশেপাশের সমস্ত হিমবাহ শুকিয়ে গিয়েছে। কয়েক বছর আগেও যে পাহাড় বরফে ঢাকা থাকত, এখন সেখানে বরফের ছিটেফোঁটাও নেই। ফলে যে পরিবারে উপযুক্ত দক্ষ সদস্য রয়েছেন, কৃষিকাজের সময় গ্রাম ছেড়ে চলে আসেন তাঁরা। বাকিদের পক্ষে গ্রাম থেকে এত দূরে এসে কৃষিকাজ করা সম্ভব নয়। জলবায়ু পরিবর্তন দুভাগে ভাগ করেছে আস্ত একটি গ্রামকে।
কুমিক গ্রামের এই পরিস্থিতি অবশ্য নতুন নয়। ৮০-র দশক থেকেই তুষারপাতের পরিমাণ ক্রমশ কমে আসছে। এমনিতেই বৃষ্টিপাত খুব একটা হয় না কুমিক গ্রামে। বর্তমানে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ নেমে এসেছে ১০ সেন্টিমিটারের আশেপাশে। এই শীতল মরুভূমি অঞ্চলে পানীয় জল থেকে কৃষিকাজ এমনকি গৃহস্থালির কাজ অথবা গবাদি পশুদের জন্য জলেরও একমাত্র উৎস ছিল হিমবাহের বরফ গলা জল। গত ৪০ বছর ধরে সেই উৎস শুকিয়ে গিয়েছে একটু একটু করে। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে বিকল্প জল সরবরাহের ব্যবস্থা করার জন্য বারবার আবেদন জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা। কিন্তু তাতে কোনো ফল হয়নি। শেষ পর্যন্ত তাসি স্তোবদান নামে এক গ্রামবাসীর নেতৃত্বে বাকিরা মিলেই বিকল্পের ব্যবস্থা শুরু করলেন।
২০১৮ সালের মধ্যেই লুংনাক নদী থেকে খাল কাটার কাজ শেষ হয়। তবে কুমিক গ্রামে খালের জলও পৌঁছায় না। তার জন্য মানথাং মালভূমি পর্যন্ত নেমে যেতে হয়। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের এই সমস্যা কেবল কুমিক গ্রামের নয়। লাদাখ উপত্যকার প্রতিটা গ্রামই কমবেশি একই সমস্যায় ভুক্তভোগী। সেচের ব্যবস্থার জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েও সাড়া পাননি কেউ। সমস্ত গ্রামে তো তাসি স্তোবদানের মতো মানুষ নেই। তাঁরা জানেন না, কীভাবে নিজেরা নদী থেকে একটু একটু করে খাল কেটে আনবেন। অবশ্য হিমবাহগুলি যেভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে, তাতে নদীতেও আর খুব বেশিদিন জল পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। কুমিক গ্রামের মানুষরা এও জানেন না, এই সমস্ত সমস্যার সমাধানের উদ্দেশ্য নিয়েই গ্লাসগো শহরে চলছে কপ-২৬ সম্মেলন। আপাতত আশু ভবিষ্যতটুকু সুরক্ষিত রাখতে পারলেই খুশি তাঁরা।
Powered by Froala Editor