প্রতিটা সংসারের শ্রীবৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন একটি পুত্রসন্তানের। এমন একটা ধারণা আজও বহু মানুষের মনে বাসা বেঁধে রয়েছে। কিন্তু ধীরে ধীরে কি বদলাচ্ছে মানসিকতা? অন্তত তেমন ইঙ্গিতই পাওয়া যাচ্ছে বিহার সরকারের একটি সমীক্ষায়। নিজস্ব সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণের ক্ষেত্রে তো মানুষের হাত নেই। কিন্তু সন্তান দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রে পুত্রসন্তানের চেয়ে কন্যা সন্তানই পছন্দ করছেন বেশি সংখ্যক পরিবার।
ভারতে শিশু পরিত্যাগের ঘটনায় প্রথম সারিতে রয়েছে বিহার। স্বাভাবিকভাবেই এইসমস্ত শিশুদের জন্য গড়ে উঠেছে নানা সরকারি সংস্থা এবং এনজিও। তাদের বেশিরভাগেরই মূল কাজ হল নিঃসন্তান পরিবারগুলির হাতে সন্তান তুলে দেওয়া। বিহারের নিঃসন্তান পরিবারগুলি তো আছেই, এছাড়াও দেশের অন্যান্য প্রান্ত এমনকি বিদেশ থেকেও অনেকে দত্তক নেন। পরিসংখ্যান বলছে, তাঁদের প্রথম পছন্দ সবসময়ই কন্যাসন্তান।
২০১৮-২০ সালের মধ্যে বিহারের মোট ৩৩০টি শিশুকে দত্তক নিয়েছে একটি করে নিঃসন্তান পরিবার। আর এর মধ্যে ২৩০টিই কন্যাসন্তান। মাত্র ১০০টি পুত্র। ২০২০-২১ সালেও ১১৩টি শিশুর মধ্যে ৯০টি কন্যা। মাত্র ২৩টি পুত্র। যাঁরা পুত্রসন্তান দত্তক নিচ্ছেন, তাঁদেরও অনেকে বাধ্য হয়েই নিচ্ছেন। কারণ কন্যা সন্তানের বিপুল চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না সরকারি সংস্থা ও এনজিও-গুলির। তাহলে কি এতদিনের অচলায়তন ভাঙছে? মানুষ বুঝছেন লিঙ্গসাম্যের গুরুত্ব?
এই তথ্যগুলিকেই একটু পৃথক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে কিন্তু অন্যরকম মনে হবে। কারণ কন্যাসন্তানদের দত্তক নেওয়ার সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনই পরিত্যক্ত শিশুদের মধ্যেও কন্যাদের সংখ্যাই বেশি। অর্থাৎ তাঁদের মা-বাবারা আজও অপয়া মনে করেই ফেলে দিচ্ছেন সন্তানদের। আর ভারতীয় সমাজে কন্যাসন্তান যেমন অমঙ্গলের প্রতীক বলে বিবেচিত, তেমনই সন্তান দত্তক নেওয়ার প্রচলনও সেভাবে নেই। কেবল সামাজিকভাবে এগিয়ে থাকা শিক্ষিত, কুসংস্কারমুক্ত মানুষরাই দত্তক নিতে এগিয়ে আসেন। সেই হিসাবে তাঁরা যে একটা লিঙ্গসাম্যের পরিবেশ চাইবেন, তাতে খুব একটা আশ্চর্যের কিছু নেই। আজও, আইনি নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সারা দেশে লিঙ্গপরিচয় নির্ধারণ করে কত কন্যাভ্রূণ হত্যা করা হয়, তার হিসাব পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু যারা কোনোভাবে বেঁচে গিয়ে পৃথিবীর আলো দেখতে পাচ্ছে, তারা যে নিজের পরিবারের স্নেহ থেকে বঞ্চিত হলেও আরেকটা পরিবার খুঁজে পাচ্ছে, এটাই আশার কথা।
আরও পড়ুন
কন্যাজন্মের আনন্দে ১১১টি বৃক্ষ রোপণ, এমনই রীতি রাজস্থানের গ্রামে
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
নিজাম পরিবারের কন্যার প্রেমে ইংরেজ সাহেব, বদলে নিলেন নাম–পোশাকও