বরফে ঢাকা আন্টার্কটিকার (Antarctica) মুকুটে ফাটল ধরেছে অনেক আগেই। ক্রমশ পৃথিবীর মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাচ্ছে। আর সেইসঙ্গে ফুলে উঠছে সমুদ্রতল। সমস্যাটা আর একেবারেই প্রাথমিক স্তরে নেই। আন্টার্কটিকার অন্যতম বড়ো হিমবাহ থোয়েইটস-ও ভেঙে পড়তে পারে আগামী ৫-১০ বছরের মধ্যে। সম্প্রতি একাধিক গবেষণায় উঠে এসেছে সেই সম্ভাবনার কথাই। আর এবার থোয়েইটস-এর সুরক্ষার জন্য আমেরিকা ও ইউরোপের বিজ্ঞানীদের নিয়ে তৈরি হল বিশেষ পর্যবেক্ষক দল। চলতি গ্রীষ্ম থেকেই হিমবাহের পরিস্থিতির উপর নজর রাখার পাশাপাশি, কীভাবে এই বিপদের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়, তা নিয়েও গবেষণা করবেন তাঁরা।
থোয়েইটস হিমবাহ আয়তনে প্রায় সমগ্র গ্রেট ব্রিটেনের সমান। তবে ইতিমধ্যে তার মধ্যে বরফের পরিমাণ কমতে শুরু করেছে। বিগত ৩০ বছর ধরে থোয়েইটস হিমবাহের বরফ গলনের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর গ্রীষ্মকালে ৫ হাজার টন বরফ গলে সমুদ্রে মিশেছে। তবে সেটাও বিপদের সামান্য পূর্বাভাস বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। এই প্রসঙ্গে ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষক ডঃ এরিন পেটি বিষয়টিকে গাড়ির উইন্ডস্ক্রিনের সঙ্গে তুলনা করেছেন। অর্থাৎ এখন উইন্ডস্ক্রিনে ফাটল ধরেছে, এবং সেই ফাটল ক্রমশ ছড়িয়েও পড়ছে। কিন্তু তার পরেও হিমবাহটি কোনোরকমে টিকে আছে। কিন্তু সামান্য ধাক্কা খেলেই সেটা ভেঙে পড়বে।
থোয়েইটস-এর এই বিপর্যয়ের কারণ সম্পর্কেও অবশ্য কিছুটা আন্দাজ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। দেখা গিয়েছে, আন্টার্কটিকের আশেপাশে সমুদ্রের জলের উষ্ণতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর উষ্ণ জলের প্রভাবে হিমবাহের সামনের অংশ শুধু গলে যাচ্ছে, তাই নয়। সেইসঙ্গে পিছনের অংশেও বরফের স্তর ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে। হিমবাহের বরফের আয়তন যত সঙ্কুচিত হচ্ছে, ততই বেশি করে সমুদ্রের দিকে এগিয়ে আসছে থোয়েইটস। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে ৫-১০ বছরের বেশি টিকবে না হিমবাহটি। আর কেবলমাত্র এই একটি হিমবাহ গলে গেলেই সমুদ্রতলের উচ্চতা ১৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পাবে। আপাতভাবে হিমবাহটিকে বাঁচানোর প্রাথমিক চেষ্টা করে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন রুখতে না পারলে এই সংকটের হাত থেকে যে মুক্তি নেই, তা বলাই বাহুল্য।
Powered by Froala Editor