ব্রিটিশ শাসনকালে গোটা আন্দামান দ্বীপপুঞ্জটাই ব্যবহৃত হত কয়েদখানা হিসাবে। বর্তমানে স্বাধীন ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র এই দ্বীপপুঞ্জ। তবে কালের চাকা ঘুরলেও গ্রেট আন্দামান বা নীলের মতো, ততটাও উন্নত হতে পারেনি লিটল আন্দামান দ্বীপ। একদিকে যেমন অত্যন্ত কম জনবসতি, তেমনই এই দ্বীপের ৯৫ শতাংশ অঞ্চলই অরণ্যে ঢাকা। ফলত, পরিবেশগত প্রতিকূলতার জন্যই তেমনভাবে বিকাশ পায়নি পর্যটন। এবার অর্থনীতির হাল ফেরাতে লিটল আন্দামানের ‘বিকাশ’-এও মনোনিবেশ করল ভারত সরকার। আর এই সিদ্ধান্ত ঘিরেই চিন্তিত পরিবেশবিদরা। কারণ, উন্নয়নের কারণে হুমকির মুখে পড়তে চলেছে দ্বীপের আদি-বাসিন্দা লেদারব্যাক টারটেল।
পৃথিবীতে মূলত সাতটি প্রজাতির সামুদ্রিক কচ্ছপ দেখতে পাওয়া যায়। যার মধ্যে পাঁচটি প্রজাতিরই দেখা মেলে ভারতে। উল্লেখ্য, লেদারব্যাক টারটেলই তাদের মধ্যে সবথেকে বৃহত্তম কচ্ছপের প্রজাতি। প্রাপ্তবয়স্ক কচ্ছপের আয়তন হয় প্রায় ৬ ফুট। ওজনে ১ টন পর্যন্ত হতে পারে এই দৈত্যাকার প্রাণী। তবে অন্যান্য কচ্ছপের মতো এদের পিঠে শক্ত খোলসের আবরণ থাকে না। বরং পুরু চামড়ায় মোড়া থাকে দেহ। সেখান থেকেই এমন নাম এই কচ্ছপের।
সাম্প্রতিক সময়ে সারা বিশ্বজুড়েই দ্রুত জনসংখ্যা কমছে এই প্রজাতির। ষাটের দশকে মালয়েশিয়ার সমুদ্র সৈকতে প্রতিবছর বাসা বাঁধত প্রায় ৫ হাজার কচ্ছপ। সেই সংখ্যাটা বর্তমানে এসে ঠেকেছে মাত্র ১০-এরও কম। একই অবস্থা কোস্টারিকা ও অন্যান্য অঞ্চলেও। শুধুমাত্র ভারতের ‘লিটল আন্দামান’-এই এখনও পর্যন্ত অক্ষত রয়েছে তাঁদের বসত।
এই প্রজাতির দ্রুত হারিয়ে যাওয়ার পিছনে গবেষকরা দায়ী করছেন নগরায়নকেই। একদিকে যেমন দ্রুত বাসস্থান হারিয়ে যাচ্ছে তাদের, তেমনই দীর্ঘ প্রজননকালও অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে অস্তিত্ব-সংকটের। ১৯৭২ সালে ভারত সরকার বিপন্নপ্রায় প্রাণীর তালিকায় জায়গা দিয়েছিল লেদারব্যাক কচ্ছপকে। নেওয়া হয়েছিল সংরক্ষণের উদ্যোগও। এমনকি সাম্প্রতিক সময়েও ভারত সরকার ২০২১-২০২৬ পর্যন্ত সামুদ্রিক কচ্ছপ সংরক্ষণের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। কিন্তু লিটল আন্দামানে পর্যটন শিল্প গড়ে উঠলে আদৌ কি কাজের কাজ হবে এসব উদ্যোগে? এই প্রশ্নই ঘুরে ফিরে আসছে বার বার।
আরও পড়ুন
আমাজনে কচ্ছপের সুনামি, ভাইরাল ৯২ হাজার সদ্যোজাত কচ্ছপের নদীতে নামার ভিডিও
তবে লিটল আন্দামানের এই উন্নয়নে শুধু কচ্ছপরাই যে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তেমনটা নয়। সেখানে নির্মিত হবে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, মেরিনা, ট্রানজিট স্টেশন, হোটেল, ক্যাসিনো, থিম পার্ক, অপেরা হাউস-সহ একাধিক নির্মাণ। ফলে নীতির বিরুদ্ধে গিয়েই কাটা হবে বিস্তীর্ণ অরণ্য। অন্যদিকে প্রভাবিত হবে এই দ্বীপের ভূমিপুত্র, ওঙ্গে জনজাতির মানুষদের জীবনও। পরিসংখ্যান অনুযায়ী তাঁদের সংখ্যা এখন কমতে কমতে মাত্র ১১২-তে এসে ঠেকেছে। সব মিলিয়ে লিটল আন্দামানের বাণিজ্যিকীকরণ ঘিরেই আশঙ্কার ছায়া ঘনাচ্ছে পরিবেশবিদ ও সমাজকর্মীদের মনে…
আরও পড়ুন
বর্জ্যের সঙ্গে ভেসে এল অন্তত ২০টি কচ্ছপের মৃতদেহ, চাঞ্চল্য কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে
তথ্যসূত্র-
Sea turtles under threat as Indian government weighs development in Andaman Islands, Rosamma Thomas, Mongabay
আরও পড়ুন
বিলুপ্তির পথে কচ্ছপ ও কাছিমের অধিকাংশ প্রজাতি, চিন্তিত প্রাণীবিদরা
Powered by Froala Editor