বিলেতে মারা গেলেন সাহেব, তখনই কলকাতায় দেখা গেল তাঁর ভূত!

ভূত ও তার চর্চা নিয়ে কলকাতা পিছিয়ে ছিল না কোনোদিনই। তিলোত্তমার বিভিন্ন জায়গাই ‘ভূতুড়ে’ আখ্যা পেয়েছে বিভিন্ন সময়। উৎসাহীরা রাতের অন্ধকারে অভিযানেও গিয়েছেন। দেখা পেয়েছেন কিনা, তা অবশ্য আলাদা প্রশ্ন। তবে কিংবদন্তির পর্যায়ে পৌঁছে গেছে কলকাতার সেসব ভূতেদের কথা। তা সে ন্যাশানাল লাইব্রেরির ভূত হোক, কিংবা রাইটার্সের। গার্স্টিন প্লেসের পুরনো আকাশবাণী ভবন হোক বা নিশুত রাতের পুতুলবাড়ি – ভূতের গল্প জোগাতে সমস্যা হয়নি কলকাতার। এমনকি, বড়লাট ওয়ারেন হেস্টিংসের ভূতও বিখ্যাত এই মহানগরীতে।

আরও পড়ুন
প্রকাশ্যে ফাঁসি দেওয়া হত কলকাতার যে রাস্তায়

কিন্তু কেমন হয়, ‘ভূত’খ্যাত ওয়ারেন হেস্টিংস নিজেই যদি জীবিতাবস্থায় ভূত দেখে থাকেন? খোদ এই কলকাতাতেই? না, গল্প নয়। সত্যিই এমন ঘটনা লিপিবদ্ধ আছে প্রাচীন একটি বইয়ে। কলকাতা স্বয়ং ইংরেজ বড়লাটকেও ভূত দেখাতে ছাড়েনি।

হেস্টিংসের সচিব ছিলেন জোসেফ কার্টার। তাঁর বর্ণনা থেকেই জানা যায় এক আশ্চর্য ঘটনার কথা। একদিন কাউন্সিল কক্ষে সভায় বসেছেন হেস্টিংস এবং তাঁর সুপ্রিম কাউন্সিলের সদস্যরা। হঠাৎ মিঃ শেক্সপিয়র বলে জনৈক এক ব্যক্তি চিৎকার করে উঠলেন। একটি নির্দিষ্ট দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলেন, ‘এ যে দেখছি আমার বাবা!’। দৃষ্টি আকর্ষণ করে সবাই দেখে, একজন অপরিচিত লোক কাউন্সিল কক্ষের ভেতর দিয়ে হেঁটে অন্যদিকে চলে গেল। লোক ঠিক নয়, বলা ভালো ‘মূর্তি’! কিন্তু কাউকে তো ঢুকতে দেখা গেল না। আস্তে আস্তে হাওয়া মিলিয়েও যায় সেই অবয়ব।

আরও পড়ুন
শহরের প্রাচীনতম সমাধি হয়ে কলকাতায় শুয়ে আছেন রেজাবিবি

লোকটিকে ঠিকঠাক ঠাওর করা না গেলেও, একটা জিনিস সবার চোখে পড়েছে ততক্ষণে। সেটা হল টুপি। একটা বিশেষ ধরনের টুপি পড়েছিলেন ওই ‘অবয়ব’, যেটাকে তখনকার দিনে ‘চিমনি পট’ বলা হত। কিন্তু ভারতে তো সেটা পাওয়া যেত না।

ঘটনার আসল চমকটা আসে কয়েকদিন পর। জাহাজে খবর এল, মিঃ শেক্সপিয়রের বাবা মারা গেছেন কয়েকদিন আগে। দিনটা কবে, পাঠক নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। যেদিন হেস্টিংস ও তাঁর দলবল কাউন্সিল কক্ষে ‘ভূত’ দেখেছিলেন,সেই দিনটিই, প্রসঙ্গত, যে জাহাজে বাবার মৃত্যুসংবাদ এল, সেই জাহাজে করেই ভারতে প্রথমবার পা রাখল ‘চিমনি পট’ টুপি!

আমাদের রোজকার দেখার বাইরেও কত ঘটনা ঘটে, যার কোনও ব্যাখ্যা আমরা পাই না। সেদিন এই ঘটনারও ব্যাখ্যা পাননি স্বয়ং ওয়ারেন হেস্টিংস। তাই এই পুরো ঘটনাটির বিবরণ লিপিবদ্ধ করে মহাফেজখানায় রাখতে বলেন তিনি।

আর এই ঘটনাই ১৮৯৩ সালে নিজের বইয়ে লেখেন জেমস ডগলাস। তিনি লিখেছিলেন – ‘In Calcutta a ghost walked into the Chamber where Warren Hastings and his Council were sitting, as Tom Killigrew did with Charles II. It (that is, the ghost) wore a stove-pipe hat, and, though it immediately vanished into thin air, it was remembered months after, when Calcutta was full of such hats.’

‘এককালীন ভূত’ বলেই কিনা জানি না, কলকাতার এই ভূতটিকে নিয়ে বিশেষ চর্চা হয়নি কোনোদিনই। অন্তত শহরের বিখ্যাত ভূতেদের পাশে তো জায়গা করে নেয়নি কোনোদিনই! ইতিহাসের পাতা খুঁড়ে সেই ভূতই তুলে আনা হল আবার। দেখুন তো, এঁকে স্বাগত জানানো যায় কিনা!