ঘোস্ট গিয়ার। নামের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে এক ধরণের ভৌতিকতা। হ্যাঁ, এ জিনিসের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যও তেমনই। প্রতি বছর কয়েক লক্ষ সামুদ্রিক প্রাণীর অপমৃত্যুর পিছনেই দায়ী থাকে ঘোস্ট গিয়ার। আর এই ঘোস্ট গিয়ারের দৌলতেই ভারসাম্য নষ্ট হতে চলেছে পৃথিবীর জীববৈচিত্রের। এমনকি পরিবর্তন হতে চলেছে জলবায়ুরও। এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য জানাল ডব্লুডব্লুএফ ওরফে ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড ফান্ড ফর নেচার।
কিন্তু কী এই ঘোস্ট গিয়ার? আসলে পরিত্যক্ত মাছ ধরার জাল, দড়ি, ধাতব তার, প্লাস্টিকের তৈরি মাছ ধরার বিভিন্ন সরঞ্জাম— এসবই ঘোস্ট গিয়ার। নষ্ট হয়ে গেলে এইসব সামগ্রী অনায়াসেই সমুদ্রে ফেলে দেন দীর্ঘদিন ট্রলারে কাটানো মৎস্যজীবীরা। তবে জৈববিয়োজ্য না হওয়ার দরুন পচন হয় না এদের। বিয়োজনে সময় লেগে যায় দশকের পর দশক।
মানুষের অনুপস্থিতিতে স্বকীয়ভাবেই মৎস্য শিকার চালিয়ে যায় এই ধরণের ঘোস্ট গিয়ারগুলি। বিজ্ঞানের পরিভাষায় যার নাম ঘোস্ট ফিশিং। মূলত সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীগুলির ক্ষেত্রেই চরম ক্ষতিকারক হয়ে দাঁড়িয়েছে এই ঘোস্ট গিয়ার। তিমি, ডলফিন, শিলের মতো স্তন্যপায়ী প্রাণী, হাঙর, কচ্ছপ প্রভৃতি প্রায়শই সমুদ্রের তলায় ভেসে থাকা এই ধরণের জালে জড়িয়ে পড়ে। কখনও খাবার ভেবেও এসব প্লাস্টিক, নাইলন-জাত পদার্থকে খেয়ে ফেলে প্রাণীরা। অতঃপর মৃত্যু।
তবে শুধুই কি তাই? আন্তর্জাতিক সংস্থা ডব্লুডব্লুএফ জানাচ্ছে আবহাওয়া পরিবর্তনেও বড়ো ভূমিকা নিচ্ছে এই ঘোস্ট গিয়ারই। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ঘোস্ট গিয়ারের পরিমাণ বর্তমানে গিয়ে ঠেকেছে প্রায় ১০ লক্ষ টন। বিপুল পরিমাণ এই অজৈব বর্জ্য বন্যজীবনকে প্রভাবিত করার সঙ্গেই বাড়িয়ে দিচ্ছে সমুদ্রের তাপমাত্রা। পাশাপাশি প্রভাবিত করছে সমুদ্রস্রোতকেও। যার পরিণাম হতে চলেছে ভয়ঙ্কর।
আরও পড়ুন
জলবায়ুর পরিবর্তনই মেরু-গণ্ডারদের অবলুপ্তির কারণ, চাঞ্চল্যকর তথ্য গবেষণায়
সমাধান খুঁজতে ইতিমধ্যেই মৎস্যজীবিকা-নির্ভর দেশগুলির কাছে দ্বারস্থ হয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থা। সমুদ্র থেকে গোস্ট গিয়ার দ্রুত সরানোর জন্যেও আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা। সেই সঙ্গে বায়োডিগ্রেডেবল ও পুনর্নবীকরণযোগ্য ফিশিং নেট ব্যবহারের আর্জি জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তা না হলে সামুদ্রিক জীবনের বাইরে মানুষের অস্তিত্বের কাছেও চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে গোস্ট গিয়ারের উপস্থিতি...
আরও পড়ুন
জলবায়ু পরিবর্তনই সিন্ধু সভ্যতার পতনের কারণ, বলছে ভারতীয় বংশোদ্ভূতের গবেষণা
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
দ্বিতীয় জলবায়ু ধর্মঘট কাল, বাকি পৃথিবীর সঙ্গে পথে নামছে বাংলাও