কারখানার বর্জ্যে রক্তলাল হুগলির নদী, অসহায় গ্রামবাসীরা

“দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ থেকে স্থানীয় প্রশাসন, প্রত্যেকেই জানেন ঘিয়া নদীর বর্তমান অবস্থা কেমন। কৃষিকাজ তো দূরের কথা, কোনো কাজেই আর ব্যবহার করা যায় না এর জল। কার্যত দুটি গেঞ্জি কারখানার নিকাশি নালায় পরিণত হয়েছে এই নদীটি। যার উপর কয়েক বছর আগেও ৪-৫টা গ্রামের মানুষের জীবন নির্ভর করত।” বলছিলেন পরিবেশকর্মী কবি মুর্মু।

কিছুদিন আগেই সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল একটি ছবি। ছবিতে নদীর জলের রং লাল। কারখানার রাসায়নিক বর্জ্যের প্রভাবেই জলের রং বদলে গিয়েছে। বর্ধমান জেলার জামালপুর থেকে উৎপন্ন দামোদরের এই শাখানদীটি দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে হুগলি জেলার ধনেখালি, পোলবা, দাদপুর, সিঙ্গুর ব্লকের উপর দিয়ে চলে গিয়েছে। এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষের জীবন জীবিকার সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত ঘিয়া নদী। কিন্তু বছর পাঁচেক আগে ভাসতারা পঞ্চায়েতের বসিপুর গ্রামে একটি গেঞ্জি কারখানা তৈরি হওয়ার পরেই দৃশ্যটা বদলে যেতে শুরু করে। এখন নদীর জল কখনও লাল, কখনও কালো বা কখনও গোলাপি। সবসময়ই তাতে এসে মিশছে কারখানার পরিত্যক্ত রাসায়নিক পদার্থ।

কবি মুর্মু জানালেন, “কারখানা থেকে সরাসরি নদীতে আবর্জনা ফেলা হয় না। প্রথমে একটি খালের মধ্যে দূষিত জল ফেলা হয়। তারপর ৫-৬ কিলোমিটার দূরে গিয়ে তা ঘিয়া নদীতে মেশে।” অথচ এই পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যে কোথাও জল পরিশোধনের ব্যবস্থা নেই। একটি গেঞ্জি কারখানার পর বছর দুয়েক আগে আরও একটি গেঞ্জি কারখানা খোলা হয়েছে বসিপুর গ্রামে। এছাড়াও রয়েছে বনসল কোম্পানির একটি পাইপ তৈরির কারখানা। প্রতিটা কারখানাতেই নানারকম ক্ষতিকারক অ্যাসিড ব্যবহার করা হয়। আর সেগুলি সবই মেশে ঘিয়া নদীতে। কারখানার কর্মচারীদের সূত্রে খবর, দ্বিতীয় গেঞ্জি কারখানাটিতে জল পরিশোধনের সমস্ত যন্ত্রই রয়েছে। কিন্তু শ্রম-খরচ ও বিদ্যুৎখরচ কমাতে সেই যন্ত্র ব্যবহার করাই হয় না।

“বছর দুয়েক আগে ঘিয়া নদীর দূষণের প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রশাসনের কাছে একাধিক অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার পরেও কেউ কোনো পদক্ষেপ নেননি। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি চাপা পড়ে যায়।” বলছিলেন কবি। দেখতে দেখতে নদীর স্বাস্থ্য আরও খারাপ হয়ে উঠছে। কৃষিকাজের খরচও বেড়েছে। চাষের জন্য এখন গভীর নলকূপই একমাত্র ভরসা। নদীর জলকে মানুষ প্রয়োজনে তো ব্যবহার করতে পারছেনই না, বরং সবসময় দুর্গন্ধে অতিষ্ট হয়ে থাকছেন তাঁরা। বিশেষ করে শীতকালে নদীর জল শুকিয়ে গেলে তা আরও বিষাক্ত হয়ে ওঠে। জলের পরিবর্তে পড়ে থাকে একধরণের চটচটে তরল পদার্থ। এইসমস্ত রাসায়নিক বর্জ্য থেকে মানুষের শরীরে নানা ধরণের রোগ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনাও প্রবল। কিন্তু এই সমস্যার সঙ্গে লড়াই করার কোনো পথ জানেন না অসহায় গ্রামবাসীরা। একমাত্র প্রশাসনের সক্রিয় উদ্যোগই বাঁচাতে পারে ঘিয়া নদী এবং তার দুইপারের গ্রামগুলিকে।

আরও পড়ুন
ছাইঢাকা গোটা অঞ্চল, এন্নোর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দূষণে বিপর্যস্ত গ্রামবাসীরা

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
প্রথম দশে না থেকেও প্লাস্টিক দূষণে জর্জরিত ভারত

More From Author See More