মৃত্যু সেখানে উৎসব; মৃতকে ঘিরে কাঁদার জন্য ভাড়া পাওয়া যায় ‘প্রফেশনাল’দের

‘জন্মিলে মরিতে হইবে’— এই লাইনটি পৃথিবীর চরমতম সত্য। তাও চলে যাওয়াটা আমরা মেনে নিতে পারি না। স্মৃতি আঁকড়ে বসে থাকা আর কী! কিন্তু অনেক জায়গায় মৃত্যু একটি উৎসব হিসেবে হাজির হয়। হয়তো শোক পালন করেন কেউ, কান্নায় ভেঙে পড়েন; কিন্তু উৎসব থামে না। এটা যে মুক্তির আনন্দ! অন্তত ঘানায় গেলে এমনটা দেখতেই পাবেন আপনি।

বহু বছর ধরে আফ্রিকার দেশ ঘানার অধিবাসীদের কাছে মৃত্যু একটি আলো হয়ে এসেছে। দুঃখ তো আছেই, কিন্তু এই আলোকেও তো অস্বীকার করা যাবে না। এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে এই প্রথা চলে আসছে সেখানে। কেউ মারা গেলে, এক সপ্তাহ ধরে রীতিমতো গানবাজনা হয় ওখানে। এর জন্য বিশেষ দোকানও আছে ওখানে। লাল অথবা কালো পোশাক পরে সবাই হাজির হন। কারোর গায়ে থাকে সোনার বালা, অলংকার। সবকিছু নিয়ে শুরু হয় উৎসব। গান, নাচ, ড্রাম বাজানো— এসব তো আছেই। সেই সঙ্গে যে কফিনে মৃত ব্যক্তিকে নিয়ে যাওয়া হবে, সেটিকেও সাজানো হয় চমৎকার ভাবে।

দুঃখও কি থাকে না? এই আনন্দের পাশে মৃতের কাছের লোকেরা শোকস্তব্ধ। তাঁদের পাশে এসে হাজির হচ্ছেন আরও অনেকে। কিছু ক্ষেত্রে আরেকটি অদ্ভুত ঘটনা দেখা যায়। মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকজনকে শেষযাত্রায় আমন্ত্রণ জানানো হয়। না, তাঁরা কেউ পুরোহিত নন। তাঁরা কাঁদবেন! হ্যাঁ, ঠিকই শুনছেন। রীতিমতো ভাড়া করে মৃতের শেষযাত্রায় কাঁদার জন্য লোক আনা হয়। এরা ‘প্রফেশনাল’। বংশ পরম্পরায় করে আসছেন এই কাজ। কিন্তু এত নাচ গান, এরকম আয়োজন কেন? ঘানার বাসিন্দাদের মতে, এই সবকিছু মৃত্যুকে উদযাপন করার জন্য। একদিকে মুক্তির আনন্দ, অন্যদিকে শোক। সব মিলিয়ে, যাতে মৃত মানুষটির আত্মা শান্তি পান, পূর্বপুরুষরাও যাতে সন্তুষ্ট হন, সেটাই লক্ষ্য।

তবে করোনার এমন দুর্যোগে খানিক থমকে আছে এই আচার। আফ্রিকার অন্যান্য দেশের মতো ঘানাতেও সচেতন হয়েছে সবাই। তাই যদি কেউ মারাও যায়, তাহলে অনলাইনেই এই উৎসব করা হচ্ছে। কিন্তু বাড়ির বাইরে যাতে আপাতত জমায়েত না হয়, সেটাই দেখছেন সবাই। কিন্তু এই প্রথা তো কতদিন ধরে চলে আসছে! এভাবে কি সব ছাড়া যায়!

Latest News See More