মাইক্রোসফট, মেটা, গুগল, আমাজন, এসএপি, আইবিএম কিংবা টুইটার— বিশ্বের অধিকাংশ প্রথম সারির আন্তর্জাতিক টেক জায়েন্টই অবস্থিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। অবশ্য কর্মীসংখ্যার দিকে থেকে দেখতে গেলে মূলত দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রযুক্তিবিদদের ছড়াছড়ি এইসব সংস্থায়। তবে বিগত দু’বছরে আর্থিক সংকট এবং মূল্যবৃদ্ধির কারণে গণহারে কর্মী ছাঁটাই করে চলেছে সিলিকন ভ্যালির (Silicon Valley) তাবড় বৈশ্বিক সংস্থাগুলি। এবার কাজ হারানো এইসমস্ত কর্মীদের জন্যই দরজা খুলে দিল জার্মানি (Germany)।
হ্যাঁ, সম্প্রতি এমনই আশ্চর্য ঘোষণা করতে শোনা গেল জার্মানির ডিজিটালাইজেশন মন্ত্রী জুডিথ গারলাচকে। অফিসিয়াল লিঙ্কডইন প্রোফাইলে জুডিথ সিলিকন ভ্যালির কাজ হারানো কর্মীদের আমন্ত্রণ জানান বাভারিয়ায়। শুধু তিনিই নন, নিজেদের দলে ছাঁটাই হওয়া কর্মীদের সামিল করতে রীতিমতো বিজ্ঞাপন দিয়েই প্রচার শুরু করেছে একাধিক খ্যাতনামা জার্মান বেসরকারি আন্তর্জাতিক সংস্থা। যার মধ্যে অন্যতম ভগসওয়াগান। গাড়ি নির্মাতা এই সংস্থার চিফ পাবলিক রিলেশন অফিসার রেনার জুগেহের কথায়, ‘দে ফায়ার, উই হায়ার’। সম্প্রতি রয়টার্সে দেওয়া তাঁর এই বক্তব্য ইতিমধ্যেই সাড়া ফেলে দিয়েছে ইউরোপজুড়ে। কিন্তু হঠাৎ ছাঁটাই হওয়া কর্মী নিয়োগের পথেই কেন এগোচ্ছে জার্মানি?
আসলে ইউরোপের সর্ববৃহৎ অর্থনীতি এবং বিশ্বের অন্যতম উন্নত দেশ হওয়া সত্ত্বেও তথ্য-প্রযুক্তিতে কয়েক প্রজন্ম পিছিয়ে রয়েছে জার্মানি। এমনকি আজও সে-দেশের অধিকাংশ সংস্থায় বাণিজ্যিক তথ্য আদানপ্রদানের জন্য ব্যবহৃত হয় ফ্যাক্স মেশিন। উল্লেখ্য, বিগত দশক পর্যন্তও ফ্যাক্স ব্যবহারের দুর্নাম বহন করতে হয়েছিল যুক্তরাজ্যকেও। তবে ডিজিটালাইজেশনের পথে হাঁটলেও নির্ধারিত সময়ে উপযুক্ত মানের এবং অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মীর অভাবে অনেকটাই ধাক্কা খেয়েছিল যুক্তরাজ্যের পরিকাঠামো এবং অর্থনীতি। দেখতে গেলে, এই ভুলটাই শুধরে নিতে চাইছে জার্মানি।
কাজেই ছাঁটাই হওয়া কর্মীদের নিয়োগ করেই ‘ফাস্ট ট্রান্সফরমেশন’-এর পথে হাঁটছে জার্মানি। একদিকে যেমন এক্ষেত্রে নিয়োগ করা কর্মীদের বিশেষ প্রশিক্ষণের প্রয়োজন পড়বে না, তেমনই তথ্যপ্রযুক্তির পরিকাঠামো তৈরিতে বিশেষভাবে সাহায্য করবে এইসকল কর্মীদের আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজ করার পূর্ব-অভিজ্ঞতা। জার্মানির দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অন্ততপক্ষে ১ লক্ষ ৩৭ হাজার আইটি কর্মীর শূন্যস্থান রয়েছে সে-দেশের শীর্ষ সংস্থাগুলিতে। যা আরও বাড়তে পারে আগামীদিনে। ইতিমধ্যেই ভিনদেশের কর্মীদের আকর্ষিত করতে অভিবাসনের আইনে বেশ কিছু বদল আনতে শুরু করেছে জার্মান প্রশাসন। বন্দোবস্ত করা হচ্ছে বাড়তি সুবিধারও। সবমিলিয়ে জার্মানির এই উদ্যোগ আশার আলো দেখাচ্ছে কাজ হারানো লক্ষ লক্ষ যোগ্যতা সম্পন্ন মানুষকে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাঙ্কের দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার পর জার্মানিতে আশ্রয় পেতে পারে বহু স্টার্টআপরা, সেই সম্ভাবনাও বাড়ছে ক্রমশই…
Powered by Froala Editor